কর্কশস্বরে মধুসূদন বলে উঠল, “কী! আমি ছোটো! আর তোমার দাদা আমার চেয়ে বড়ো?”
কুমু বললে, “তোমাকে বড়ো জেনেই তোমার ঘরে এসেছি।”
মধুসূদন ব্যঙ্গ করে বললে, “বড়ো জেনেই এসেছ, না, টাকার লোভে?”
তখন কুমু সোফা থেকে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে খোলা ছাদে মেজের উপর গিয়ে বসল।
কলকাতায় শীতকালের কৃপণ রাত্রি, ধোঁয়ায় কুয়াশায় ঘোলা, আকাশ অপ্রসন্ন, তারার আলো যেন ভাঙা গলার কথার মতো। কুমুর মন তখন অসাড়, কোনো ভাবনা নেই, কোনো বেদনা নেই। একটা কুয়াশার মধ্যে সে যেন লুপ্ত হয়ে গেছে।
কুমু যে এমন করে নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে যাবে মধুসূদন এ একেবারে ভাবতেই পারে নি। নিজের এই পরাভবের জন্যে সকলের চেয়ে রাগ হচ্ছে কুমুর দাদার উপর। শোবার ঘরে চৌকির উপরে বসে পড়ে শূন্য আকাশের দিকে সে একটা ঘুষি নিক্ষেপ করলে। খানিকক্ষণ বসে থেকে ধৈর্য আর রাখতে পারলে না। ধড়ফড় করে উঠে ছাদে বেরিয়ে ওর পিছনে গিয়ে ডাকলে, “বড়োবউ।”
কুমু চমকে উঠে পিছন ফিরে দাঁড়ালে।
“ঠাণ্ডায় হিমে বাইরে এখানে দাঁড়িয়ে কী করছ? চলো ঘরে।”
কুমু অসংকোচে মধুসূদনের মুখের দিকে চেয়ে রইল। মধুসূদনের মধ্যে যেটুকু প্রভুত্বের জোর ছিল তা গেল উড়ে। কুমুর বাঁ হাত ধরে আস্তে আস্তে বললে, “এস ঘরে।”
কুমুর ডানহাতে তার দাদার আশীর্বাদের সেই টেলিগ্রাম ছিল সেটি সে বুকে চেপে ধরল। স্বামীর হাত থেকে হাত টেনে নিলে না, নীরবে ধীরে ধীরে শোবার ঘরে ফিরে গেল।