কুমু হাবলুকে ধরে ঘরে নিয়ে এসে কোলে বসালে। ওর গৃহসজ্জার মধ্যে পুতুল-জাতীয় যা-কিছু জিনিস ছিল সেইগুলো দুজনে নাড়াচাড়া করতে লাগল। কুমু বুঝতে পারলে একটা কাগজচাপা হাবলুর ভারি পছন্দ— কঁচের ভিতর দিয়ে রঙিন ফুল যে কী করে দেখা যাচ্ছে সেইটে বুঝতে না পেরে ওর ভারি তাক লেগেছে।
কুমু বললে, “এটা নেবে গোপাল?”
এতবড়ো অভাবনীয় প্রস্তাব ওর বয়সে কখনো শোনে নি। এমন জিনিসও কি ও কখনো আশা করতে পারে? বিস্ময়ে সংকোচে কুমুর মুখের দিকে নীরবে চেয়ে রইল।
কুমু বললে, “এটা তুমি নিয়ে যাও।”
হাবলু আহ্লাদ রাখতে পারলে না— সেটা হাতে নিয়েই লাফাতে লাফাতে ছুটে চলে গেল।
সেইদিন বিকেলে হাবলুর মা এসে বললে, “তুমি করেছ কী ভাই? হাবলুর হাতে কাঁচের কাগজচাপা দেখে বড়ঠাকুর হুলস্থূল বাধিয়ে দিয়েছে। কেড়ে তে নিয়েইছে—— তার পর তাকে চোর বলে মার। ছেলেটাও এমনি, তোমার নামও করে নি। হাবলুকে আমিই যে জিনিসপত্র চুরি করতে শেখাচ্ছি এ-কথাও ক্রমে উঠবে!”
কুমু কাঠের মূর্তির মতো শক্ত হয়ে বসে রইল।
এমন সময়ে বাইরে মচ মচ শব্দে মধুসূদন আসছে। মোতির মা তাড়াতাড়ি পালিয়ে গেল। মধুসূদন কাঁচের কাগজচাপা হাতে করে যথাস্থানে ধীরে ধীরে সেটা গুছিয়ে রাখলে। তার পরে নিশ্চিতপ্রত্যয়ের কণ্ঠে শান্ত গম্ভীর স্বরে বললে, “হাবলু তোমার ঘর থেকে এটা চুরি করে নিয়েছিল। জিনিসপত্র সাবধান করে রাখতে শিখো।”
কুমু তীক্ষ্ণ স্বরে বললে, “ও চুরি করে নি।”