পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 মধুসূদন গর্জন করে উঠল, “কিছু করতে হবে না, যাও চলে! খিদে পেলে আপনিই খাবে।”

 শ্যামা যেন অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে চলে গেল।

 মধুসূদনের মাথায় রক্ত চড়তে লাগল। দ্রুতবেগে নাবার ঘরে জলের ঝাঁঝরি খুলে দিয়ে তার নিচে মাথা পেতে দিলে।


২৭

 সন্ধ্যে হয়ে এল, সেদিন কুমুকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। শেষকালে দেখা গেল, ভাঁড়ারঘরের পাশে একটা ছোটো কোণের ঘরে যেখানে প্রদীপ পিলসুজ তেলের ল্যাম্প প্রভৃতি জমা করা হয় সেইখানে মেজের উপর মাদুর বিছিয়ে বসে আছে।

 মোতির মা এসে জিজ্ঞাসা করলে, “এ কী কাণ্ড দিদি?”

 কুমু বললে, “এ-বাড়িতে আমি সেজবাতি সাফ করব, আর এইখানে আমার স্থান।”

 মোতির মা বললে, “ভালো কাজ নিয়েছ ভাই, এ-বাড়ি তুমি আলো করতেই তো এসেছ, কিন্তু সে-জন্যে তোমাকে সেজবাতির তদারক করতে হবে না। এখন চলো।”

 কুমু কিছুতে নড়ল না।

 মোতির মা বললে, “তবে আমি তোমার কাছে শুই।”

 কুমু দৃঢ়স্বরে বললে, “না।” মোতির মা দেখলে এই ভালোমানুষমেয়ের মধ্যে হুকুম করবার জোর আছে। তাকে চলে যেতে হল।

 মধুসূদন রাত্রে শুতে এসে কুমুর খবর নিলে। যখন খবর শুনলে, প্রথমটা ভাবলে, “বেশ তো ওই ঘরেই থাক্ না, দেখি কতদিন থাকতে পারে। সাধ্যসাধনা করতে গেলেই জেদ বেড়ে যাবে।”

৯৬