পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

চলেছি— তােমারও নেমন্তন্ন রইল। কিন্তু তােমাকে দক্ষিণে দেবার মতাে শক্তি নেই ভাই।”

 মধুসূদনের মুখে একটা জবাব আসছিল, সেটা চেপে গেল।

 সেই শেষরাত্রের অন্ধকারে প্রদীপের আলােয় শ্যামাকে সুন্দর দেখাচ্ছিল। শ্যামা একটু হেসে বললে, “আজ ঘুম থেকে উঠেই তােমার মতাে ভাগ্যবান পুরুষের মুখ দেখলুম, আমার দিন ভালােই যাবে। ব্রত সফল হবে।”

 ভাগ্যবান শব্দটার উপর একটু জোর দিলে— মধুসূদনের কানে কথাটা বিড়ম্বনার মতাে শােনাল। কুমুর সম্বন্ধে কোনাে কথা স্পষ্ট করে জিজ্ঞাসা করতে শ্যামার সাহস হল না। “কাল কিন্তু আমার ঘরে খেতে এসাে, মাথা খাও,” বলে সে চলে গেল।

 ঘরে এসে মধুসূদন বিছানায় শুয়ে পড়ল। বাইরে লণ্ঠনটা রাখলে, যদি কুমু আসে। কুমুদিনীর সেই সুপ্ত মুখ কিছুতে মন থেকে নড়তে চায় না; আর কেবলই মনে পড়ে কুমুর অতুলনীয় সেই হাতখানি শালের বাইরে এলিয়ে। বিবাহকালে এই হাত যখন নিজের হাতে নিয়েছিল তখন একে সম্পূর্ণ দেখতে পায় নি— আজ দেখে-দেখে চোখের আর আশ মিটতে চায় না। এই হাতের অধিকারটি সে কবে পাবে? বিছানায় আর টিঁকতে পারে না; উঠে পড়ল। আলাে জ্বালিয়ে কুমুর ডেস্কের দেরাজ খুললে। দেখলে সেই পুঁতি-গাঁথা থলিটি। প্রথমেই বেরােল বিপ্রদাসের টেলিগ্রামখানি— “ঈশ্বর তােমাকে আশীর্বাদ করুন”— তার পরে একখানি ফটোগ্রাফ, ওর দুই দাদার ছবি আর একখানি কাগজের টুকরাে, বিপ্রদাসের হাতে-লেখা গীতার এই শ্লোক—

যৎ করোষি যদশ্নাসি যজ্জুহোষি দদাসি যৎ,
যৎ তপস্যসি, কৌন্তেয়, তৎ কুরুম্ব মদর্পণম্।

৯৮