পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাগুলাল এও জানি, এ কাজ তোমার দ্বারা হল না । চন্দ্রা এমন আরামের কাজেও টিকতে পারলে না বেয়াই ? বিশু আরামের কাজ ? একটা সজীব দেহ, তার পিছনে পৃষ্ঠত্রণ হয়ে লেগে থাকা । বললুম, “দেশে যাব, শরীর বড়ো খারাপ । সর্দার বললেন, ‘আহা, এত খারাপ শরীর নিয়ে দেশে যাবেই বা কেমন করে ? তবু চেষ্টা দেখো । চেষ্টা দেখলুম। শেষে দেখি যক্ষপুরীর কবলের মধ্যে ঢুকলে তার হা বন্ধ হয়ে যায়, এখন তার জঠরের মধ্যে যাবার একটি পথ ছাড়া আর পথই নেই। আজ তার সেই আশাহীন আলোহীন জঠরের মধ্যে তলিয়ে গেছি। এখন তোতে আমাতে তফাত এই যে, সর্দার তোকে যতটা অবজ্ঞা পঙক্তি ৪৬১-৪৭০ > কেননা জানি, একাজ তোমার দ্বারা হ’ল না। তুমি আমাদেরই সঙ্গে গেলে মিশে। আজ তুমি যেমন আমাদের আপন এমন আর কেউ নেই। মকররাজ আমার কাছে খনিবিদ্যা শিখবে বলে তার সর্দার ত আমাকে ভুলিয়ে নিয়ে এল। কিছুদিন শিখলও বটে, কিন্তু সে ত শেখা নয় যেন একেবারে জোক লাগিয়ে শুষে নেওয়া । যখন আমার বিদ্যে আর বাকি রইল না, তখন সর্দার বললে, তোমাকে আর কিচ্ছুই করতে হবে না, দিনের বেলায় ওদের সঙ্গে কথাবাৰ্ত্তা কইবে, তার পরে সন্ধ্যেবেলায় আমার কাছে এসে গল্প করবে। দিনের বেলায় তুমি ওদের বন্ধু, সন্ধে বেলায় আমার। বলে’ অল্প একটুখানি চোখ টিপে হাসলে। এমন আরামের কাজ বেশিদিন টিকল না কেন ? কি বল, বেয়ান, আরামের কাজ ? চারদিকে জ্যান্ত মানুষের মাঝখানে একটামাত্র ভূতকে যদি বাস করতে হয় তবে সে কি ভয়ঙ্কর একলা,– আমার সেই দশা হল। সর্দারকে গিয়ে বললুম, দেশে যাব, আমার শরীর বড় খারাপ। সর্দার দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললে, “আহা, এমন খারাপ শরীর নিয়ে যাবেই বা কি করে । তবু না হয় চেষ্টা করে দেখ।” চেষ্টা করে দেখলুম। দেখি, একটা দরজা যদি বা কোনো সুযোগে খোলে ত আরেকটা বন্ধ । ঢোকবার সময় এতগুলো দরজার হিসেব পাইনি। বুঝলুম, মকরের পেটে পৌছবার মুখে যে পথ আলগা থাকে, পেটে পৌঁছলে সে পথ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তোদের দলে মিলে গেলুম। কোদাল ধরলুম, মদও ধরলুম। তোদের সঙ্গে আজ আমার এইটুকু মাত্র তফাৎ যে, সর্দার তোদের যতটা অবজ্ঞা > ○> 8Ꮼ☾ 8ዔ o