পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উঠল খেয়ে খেয়ে আর থাকতে পারিনে। শক্তি কেবল শক্তিকে খায়, আর গৰ্জ্জন করতে থাকে, থাকব, থাকব। কেবল একদিন একরাত্রি জ্যান্ত খাবার বন্ধ করেচি অমনি দেখ আমার সমস্তটাই যেন মরা নদীর পাকের মত।” আমাকে জিজ্ঞাসা করলে, “তোমার ভয় করচে ?” আমি বল্লুম, “একটুও না ; আমি তোমাকে বাঁচাতে চাই।” শুনে ঐ যেন প্রকাণ্ড রাশ-করা স্থবিরতার মধ্যে একটুখানি জোর পৌছল। ব্যাকুল হয়ে বললে, “তুমি যদি সত্যিই চাও আমি বাচি তাহলে আমি মরব না, মরব না, তোমাকে বলে রাখচি আমি বাচব ।” তারপরে কতদিন ওর ঘরে গেচি, ওর ঘর সাজিয়ে এসেচি, মনে হত ও লুকিয়ে কোথা থেকে আমাকে দেখচে । কিন্তু আর আমাকে দেখা দেয় নি। পাগল ভাই, ওর উপরে দয়া হয় না তোমার ? বিশু যেদিন ওর পরে বিধাতার দয়া হবে সেদিন ও মরবে। নন্দিনী কিন্তু তুমি জান না বেঁচে থাকবার জন্যে ও যেন মরীয়া হয়ে আছে। বিশু সেইজন্যেই ওর বাচাটা সকলের পক্ষে এমন ভয়ানক । নন্দিনী না, না, আমন কথা বোলো না। বিশু ওর বাঁচা বলতে কি বোঝায় সে আমি তোমাকে আজই দেখাব । জানিনে, সইতে পারবে কিনা ৷ নন্দিনী ঐ দেখ, পাগল ভাই, ঐ ছায়া ! নিশ্চয় সর্দার আমাদের কথা নুকিয়ে শুনচে । WS) বিশু তুমি যে বললে, “জানিনে,” অথচ সেই না-জানাকেই সব চুকিয়ে দিতে চাও ! ও যে কেবল স্পষ্ট জানার খদ্দের, আঁকড়ে ধরার মালেক, তাই তোমাকে ভয় করে । नन्मिनी পরদিন কি হল জান ? ওর দরজা খোলাই ছিল। এমন আর কোনোদিন দেখিনি। হঠাৎ ঘরে ঢুকেই চমকে উঠলুম। কি চেহারা ! মুখের চামড়া ঝুলে পড়েচে, চোখের পাতা তুলতে পারচে না, হাত দুটো নেতিয়ে পড়ে আছে যেন শালগাছের ঝড়ে মুচড়ে-পড়া ডাল। ওর শক্তি প্রকাণ্ড দেখেচি ওর নিঃশক্তিও তেমনি ভয়ঙ্কর বিপুল— তার ভার যেন পৃথিবী সইতে পারবে না এমনিতরো। দুই হাতে চোখ ঢেকে বললুম, “এ চেহারা আমি দেখতে পারিনে।” সে বললে, “নন্দিন, এই চেহারাটাই আমার চরম সত্য ।” মেঘের ডাকের মত আওয়াজটা কোথায় ? স্বর ক্ষীণ, দুৰ্ব্বল, করুণ। মনে বড় কষ্ট ここ ○