পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○。 দিয়েচি। কিন্তু রোসো, দেখি কেউ শুনচে কিনা। এখানে চারদিকেই চর। —ওকে আমরা বলি মকর। কেন বল ত ? মকরের মত ওর চে খের উপর পর্দা নেই, একটা চষমা আছে। শুনেচি, যখন ঘুমিয়ে থাকে তখনো খোলে না। তার কারণ ? ওর চষমায় যে ছায়া পড়ে তার দাগ থাকে। ঘুমের সময় কি দেখা দিয়েছিল জেগে উঠে তা জানতে পায়। চোখ ভুল দেখতে পারে বলে, শুনেচি নিজের চোখ প্রায় বুজেই রাখে, চষমার উপরেই দেখার ভার। চোখের চেয়ে চষমা ভাল দেখে বলচ ? দাঁতের চেয়ে ঘানিতে যেমন নারকেলের তেল ভাল বেরয়। ঘানি নারকেলের স্বাদ পায় না কিন্তু তেলটা পুরোপুরি বের করে দেয়। চোখ বাদসাধ দিয়ে দেখে, চষমা ষোলো আনা দেখতে পায় । চোখের পক্ষপাত আছে চষমা নিৰ্ব্বিকার। মকর বলে যেখানে দরদ আসে সেইখানেই ভুল আসে। তাহলে জগৎটাকে ও জ্যান্ত চোখ দিয়ে দেখেই না ! না, তাই ও কেবল হিসাব দেখে, ছবি দেখে না। ঐ যে চরের কথা বললে সে বুঝি ওর কানের চষমা ! তার শোনাও জ্যান্ত শোনা নয়, তার মধ্যে কোনো দরদ নেই, শুধু খবর আছে। এ জায়গাটা সন্দেহের শনিগ্রহ বল্লেই হয় । আমরাও দিনরাত্রি সন্দেহ করচি ওরাও তাই। শ্রদ্ধার চোখে ভুল দেখবার আশঙ্কা আছে, সন্দেহের চোখে দেখাই সত্য দেখার উপায় এখানকার এই বিশ্বাস । তাহলে এখন থেকে আমাকে এরা সন্দেহের চোখে যাচাই করবে ? প্রতি মুহূৰ্ত্তেই। হরিনামের বুলি নিয়ে বেড়াও, বুলিটার ভিতরে সন্দেহ সেধিয়ে কিলবিল করতে থাকবে । মাথা হেট করে’] ওদের পায়ে হাত দিতে যাও, সন্দেহ ছ্যাক করে উঠে বলবে, জুতোচুরির মতলব ! ওরা চরের উপর দৃষ্টি রাখার জন্যে চর লাগায়। ওরা নিজে মিথ্যে বলে তোমাকে ভোলাতে, তুমি যা বল তা বিশ্বাস করে না। এ কেমনতর ব্যাপার হে বস্তুবাগীশ ? এরা ত তোমার সঙ্গে প্রণয় করতে চায় না, তোমাকে ব্যবহার করতে চায়। তাই দামে ঠকতে ভায় পায়, কেবলি ঠংঠং করে বাজিয়ে দেখে । দাদা, তুমি এতদিন এখানে টিকে আছ কেমন করে ? একেবারে শুকিয়ে গেছি বলেই টিকে আছি। তোমারো একদিন যখন সব রস মারা যাবে তখন আমার মত মজবুৎ হয়ে উঠবে। ૨ পুরাণ সৰ্ব্বনাশ, এ কোন জায়গায় তুমি আমাকে আনলে বল দেখি ? আর কি কৰ্ত্তেই বা আন .. ? ৪ [ দৃশ্যান্তর-চিহ্ন ]