পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& q8 রাবণ দুই নামের দুই বিপরীত অর্থ। রাম হল আরাম, শান্তি ; রাবণ হল চীৎকার, অশান্তি। একটিতে নবাকুরের মাধুর্য, পল্লবের মর্মর ; আর একটিতে শানবাঁধানো রাস্তার উপর দিয়ে দৈত্যরথের বীভৎস শৃঙ্গধবনি। কিন্তু তৎসত্ত্বেও রামায়ণ রূপক নয়, আমার রক্তকরবীর পালাটিও রূপকনাট্য নয়। রামায়ণ মুখ্যত মানুষের সুখদুঃখ বিরহমিলন ভালোমন্দ নিয়ে বিরোধের কথা। মানবের মহিমা উজ্জ্বল করে ধরবার জন্যেই চিত্রপটে দানবের পটভূমিকা। এই বিরোধ একদিকে ব্যক্তিগত মানুষের, আরেকদিকে শ্রেণীগত মানুষের। রাম ও রাবণ একদিকে দুই মানুষের ব্যক্তিগত রূপ, আরেকদিকে মানুষের দুই শ্রেণীগত রূপ। আমার নাটকও একই কালে ব্যক্তিগত মানুষের, আর মানুষগত শ্রেণীর। শ্রোতারা যদি কবির পরামর্শ নিতে অবজ্ঞা না করেন তা হলে আমি বলি শ্রেণীর কথাটা ভুলে যান। এইটি মনে রাখুন, রক্তকরবীর সমস্ত পালাটি নন্দিনী বলে একটি মানবীর ছবি। চারিদিকের পীড়নের ভিতর দিয়ে তার আত্মপ্রকাশ। ফোয়ারা যেমন সংকীর্ণতার পীড়নে হাসিতে অশুতে কলধ্বনিতে উর্ধের্ব উচ্ছসিত হয়ে ওঠে তেমনি। সেই ছবিটির দিকেই যদি সম্পূর্ণ করে তাকিয়ে দেখেন তা হলে হয়তো কিছু রস পেতে পারেন, আর রক্তকরবীর পাপড়ির আড়ালে অর্থ খুঁজতে গিয়ে যদি অনর্থ ঘটে তা হলে তার দায় কবির নয়। নাটকের মধ্যেই কবি আভাস দিয়েছে যে, মাটি খুঁড়ে যে-পাতালে খনিজ ধন খোঁজা হয় নন্দিনী সেখানকার নয় ; মাটির উপরিতলে যেখানে প্রাণের গান, যেখানে রূপের নৃত্য, যেখানে প্রেমের লীলা নন্দিনী সেই সহজ সুখের, সেই সহজ সৌন্দর্যের । শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আগেই বলেছি, ‘রক্তকরবী'র কবির অভিভাষণ'-এর এই খসড়াটির ফোটোকপি ১৯৭৮ সালে নির্মলকুমারী মহলানবিশ তার ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে রক্তকরবী'র পাঠভেদ-সংস্করণের কাজে ব্যবহারের জন্য আমাকে দিয়েছিলেন । এই ফোটোকপিতে দেখা যায়— লেখাটির ডানদিকে রবীন্দ্রনাথ নিজের হাতে কিছু কিছু পাঠ-পরিবর্তন করেছেন, বিশেষত ছেদচিহ্নের । দুর্ভাগ্যবশত এই খসড়াটির রচনাকাল (তারিখ) নেই। এই খসড়াটির সঙ্গে প্রবাসীতে প্রকাশিত মুদ্রিত রচনাটির কিছু কিছু অমিল আছে, অন্তত ছেদচিহ্নের ক্ষেত্রে। শব্দগত পরিবর্তনও কিছু আছে। নির্মলকুমারী মহলানবিশের ংগ্রহ থেকে যে খসড়াটি এখানে উদ্ধৃত করেছি, দেখা যায়, তার শেষে রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষর রয়েছে, খসড়াটিও তাঁরই হাতে লেখা। এরই অনুসরণে প্রবাসী'র লেখায় যেসব পরিবর্তনের চিহ্ন দেখি তাও কবির সম্মতিক্ৰমেই ঘটেছে বলে অনুমান করা যায় | বস্তুত, রক্তকরবী'র প্রথম সংস্করণে প্রস্তাবনা রূপে যা মুদ্রিত হতে দেখি এবং এখনও পর্যন্ত গ্রন্থপরিচয়'-এ যা মুদ্রিত হয়ে আসছে, তা প্রকৃতপক্ষে নির্মলকুমারী মহলানবিশের সংগ্রহে রক্ষিত খসড়ারই অনুরূপ। কিন্তু, শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত অন্য একটি খসড়া (MS. 135) রয়েছে অনুলিপি করেছিলেন বিধুভুষণ গুপ্ত) যা এই খসড়াটির পূর্বরূপ বলেই মনে