পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○8 কেন ? নেপথ্যে আমার যা আছে সব বোঝা হয়ে আছে। সোনাকে জমিয়ে তুলে তো পরশমণি হয় না— শক্তি যতই বাড়াই যৌবনে পৌঁছল না। তাই পাহারা বসিয়ে তোমাকে বাঁধতে চাই। রঞ্জনের মতো যৌবন থাকলে ছাড়া রেখেই তোমাকে বাঁধতে পারতুম। এমনি ক’রে বাঁধনের ২৬৫ রশিতে গাঁট দিতে দিতেই সময় গেল। হায় রে, আর-সব বাধা পড়ে, কেবল আনন্দ বাধা পড়ে না। নন্দিনী তুমি তো নিজেকেই জালে বেঁধেছ, তার পরে কেন এমন ছটফট করছ বুঝতে পারি নে। নেপথ্যে বুঝতে পারবে না। আমি প্রকাণ্ড মরুভূমি— তোমার মতো ২৭০ পঙক্তি ২৬১-২৭০ SR নেপথ্যে না, যেয়ো না, আমার কথাগুলো বলে নিই। সোনাকে বাড়িয়ে তুলে ত পরশমণি হয় না ! শক্তি যতই বাড়াই যৌবনে পৌঁছাল না। তাই পাহারা দিয়ে তোমাকে বাঁধি, রঞ্জনের মত যৌবন থাকলে মুক্ত রেখে তোমাকে বাঁধতে পারতুম। বেঁধে রাখবার এমনি করে আয়োজনেই সময় গেল কিন্তু হায়রে, আর সব বাধা পড়ে কেবল আনন্দ বাধা পড়ে না। তুমি বোধহয় ভাল করে জানই না, আমি কত মস্ত, আমার কত শক্তি, কত সঞ্চয় । তুমি ঐ এতটুকু আমারি মত একটি ক্লান্ত পাহাড়কে আমি দেখেছিলুম— বাইরে থেকে বুঝতেই পারিনি যে তার সমস্ত পাথর ভিতরে ভিতরে ব্যথিয়ে উঠেছে। একদিন নিশীথ রাতে একটা ভীষণ শব্দ শুনতে পেলুম— যেন একটা দৈত্যের দুঃস্বপ্ন গুমরে গুমরে হঠাৎ ভেঙে গেল। পরদিন সকালে দেখি সেই পাহাড়টা ভূমিকম্পের টানে মাটির নিচে কোথায় বসে গেচে । বাইরে থেকে কেউ কি জানে নীচে থেকে উপর পর্য্যন্ত আমার মধ্যে সমস্তই কেবল ভার ; –বিধাতার বাঁশিতে যে নাচের মন্ত্রে ব্ৰহ্মাণ্ডের ভার হালকা করে দিয়ে তাকে আকাশে আকাশে নাচিয়ে তোলে নন্দিন তোমাকে দেখে আমি সেই নাচের ছন্দের আভাস পাই। কিন্তু আমার তুলনায় তুমি কে, তুমি কতটুকু ৷ অথচ তোমাকেও আজ ঈর্ষা করতে হচ্চে বিধাতা আমাকে এমন বিদ্রুপ কেন করলে ? তার ভাণ্ডার থেকে যা লুটে নেবার তা ত লুটে নিচ্চিই কিন্তু তার বদ্ধমুঠোর মধ্যে যে দান লুকোনো আছে, সেইটেই আসল জিনিষ, সে আমি কেন পাব না ? যে করে হোক