পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-ऑधां८ढनांकन ూ সাজে, যে, যুক্তির অনুমতি-পত্র না থাকিলেও সকলে তাহাকে বিশ্বাস করে । এমনি তাহার মুখখানি সুন্দর, যে, কেহই তাহাকে “কে” “কি বৃত্তান্ত” “কেন” জিজ্ঞাসা করে না, কেহ তাহাকে সন্দেহ করে না, সকলে হৃদয়ের দ্বার খুলিয়া ফেলে, সে সৌন্দর্ঘ্যের বলে তাহার মধ্যে প্রবেশ করে । কিন্তু নিরলঙ্কার যৌক্তিক সত্যকে প্রতি পদে বহুবিধ প্রমাণসহকারে আত্ম-পরিচয় দিয়া আত্মস্থাপনা করিতে হয়, দ্বারীর সন্দেহভঞ্জন করিতে হয়, তবে সে প্রবেশের অনুমতি পায় । অস্থভাবের ভাষা ছন্দোবদ্ধ। পূর্ণিমার সমুদ্রের মত তালে তালে তাহার হৃদয়ের উখান পতন হইতে থাকে, তালে তালে তাহার ঘন ঘন নিশ্বাস পড়িতে থাকে। নিশ্বাসের ছন্দে, হৃদয়ের উখান পতনের ছন্দে তাহার তাল নিয়মিত হইয়া থাকে কথা বলিতে বলিতে তাহার বাধিয়া যায়, কথার মাঝে মাঝে অশ্রু পড়ে, নিশ্বাস পড়ে, লজ্জা আসে, ভয় হয়, থামিয়া যায়। সরল যুক্তির এমন তাল নাই, আবেগের দীর্ঘনিশ্বাস পদে পদে তাহাকে বাধা দেয় না । তাহার ভয় নাই, লজ্জা নাই, কিছুই নাই । এই নিমিত্ত, চূড়ান্ত যুক্তির ভাষা গদ্য, চূড়ান্ত অস্থভাবের ভাষা পদ্য । আমাদের ভাব প্রকাশের দুটি উপকরণ আছে–কথা ও স্বর। কথাও যতখানি ভাব প্রকাশ করে, স্বরও প্রায় ততথানি ভাব প্রকাশ করে। এমন কি, স্বরের উপরেই কথার ভাব নির্ভর করে। একই কথা নানা স্বরে নানা অর্থ প্রকাশ করে । অতএব ভাবপ্রকাশের অঙ্গের মধ্যে কথা ও সুর উভয়কেই পাশাপাশি ধরা য়াইতে পারে । সুরের ভাষা ও কথার ভাষা উভয় ভাষায় মিশিয়া আমাদের ভাবের ভাষা নিৰ্ম্মাণ করে । কবিতায় আমরা কথার ভাষাকে প্রাধান্য দিই ও সঙ্গীতে স্থরের ভাষাকে প্রাধান্ত দিই। যেমন, কথোপকথনে আমরা যে সকল কথা যেরূপ শৃঙ্খলায় ব্যবহার করি, কবিতায় আমরা সে সকল কথা সেরূপ শৃঙ্খলায় ব্যবহার করি না, কবিতায় আমরা বাছিয়া বাছিয়া কথা লই, সুন্দর করিয়া বিন্যাস করি—তেমনি কথোপকথনে আমরা যে সকল স্বর যেরূপ নিয়মে ব্যবহার করি, সঙ্গীতে সে সকল স্থর সেরূপ নিয়মে ব্যবহার করি না, স্থর বাছিয়া বাছিয়া লই, সুন্দর করিয়া বিন্যাস করি । কবিতায় যেমন বাছা বাছা সুন্দর কথায় ভাব প্রকাশ করে, সঙ্গীতেও তেমনি বাছা বাছা সুন্দর স্বরে ভাব প্রকাশ করে। যুক্তির ভাষায় প্রচলিত কথোপকথনের স্বর ব্যতীত আর কিছু আবখ্যক করে না। কিন্তু যুক্তির অতীত আবেগের ভাষায় সঙ্গীতের স্বর আবশ্বক করে। এ বিষয়েও সঙ্গীত অবিকল কবিতার ন্যায় । সঙ্গীতেও ছন্দ আছে । তালে তালে তাহার মুরের লীলা নিয়মিত হইতেছে । কথোপকথনের ভাষায় স্থশূঙ্খল ছন্দ নাই, কবিতায় ছন্দ আছে, তেমনি কথোপকথনের ১২