পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

के»रै R রবীন্দ্র-রচনাবলী বসান হইয়াছে , তাহা হইলে কবিতা কতকটা আধুনিক গানের মত হইত। ঐ কয়েকটি কথা ব্যতীত আর একটি কথা যদি বিদ্যাপতি বসাইতে চেষ্টা করিতেন, তাহা হইলে কবিতাপ্রিয় ব্যক্তিগণ ধিক্ ধিক করিতেন ও র্তাহার কবিতার নাম হইত “কবিতা জংলা বসন্ত ।” এরূপ হইলে আমাদের কবিতার কি দ্রুত উন্নতিই হইত। কবিতার ছয় রাগ ছত্রিশ রাগিণী বাহির হইত, বিদেশ-বিদ্বেষী জাতীয়ভাবোন্মত্ত আৰ্য্যপুরুষগণ গৰ্ব্ব করিয়া বলিতেন, উঃ, আমাদের কবিতায় কতগুলা রাগ রাগিণী আছে, আর অসভ্য ম্লেচ্ছদের কবিতায় রাগ রাগিণীর লেশ মাত্র নাই । আমরা যেমন আজ কাল নব-রসের মধ্যেই মারামারি করিয়া কবিতাকে বন্ধ করিয়া রাখি না, অলঙ্কার-শাস্ত্রোক্ত আড়ম্বরপূর্ণ নামের প্রতি দৃষ্টি করি না—তেমনি সঙ্গীতে কতকগুলা নাম ও নিয়মের মধ্যেই যেন বদ্ধ হইয়া না থাকি। কবিতারও যে স্বাধীনতা আছে সঙ্গীতেরও সেই স্বাধীনতা হউক, কারণ সঙ্গীত কবিতার ভাই । যেমন সন্ধ্যার বিষয়ে কবিতা রচনা করিতে গেলে কবি সন্ধ্যার ভাব কল্পনা করিতে থাকেন ও র্তাহার প্রতি কথায় সন্ধ্যা মূৰ্ত্তিমতী হইয়া উঠে, তেমনি সন্ধ্যার বিষয়ে গান রচনা করিতে গেলে রচয়িতা যেন চোখ কান বুজিয়া পুরবী না গাহিয়া যান, যেন সন্ধ্যার ভাব কল্পনা করেন, তাহা হইলে অবসান দিবসের ন্যায় তাহার সুরও আপনাআপনি নামিয়া আসিবে, মুদিয়া আসিবে, ফুরাইয়া আসিবে। প্রত্যেক গীতিকবিদের রচনায় গানের নূতন রাজ্য আবিষ্কার হইতে থাকিবে । তাহা হইলে গানের বাল্মীকি গানের কালিদাস জন্ম গ্রহণ করিবেন। বস্তুগত ও ভাবগত কবিতা । চারিদিকে লোক জন, চারিদিকেই হাট বাজার, সদা সৰ্ব্বদাই কাজকৰ্ম্ম, বিষয়আশয়ের চিন্তা । সম্মুখে দেনাদার, পশ্চাতে পাওনাদার, দক্ষিণে বিষয়-কৰ্ম্ম, বামে লোক-লৌকিকতা, পদতলে গত কল্যের খরচ, মাথার উপরে আগামী কল্যের জন্য জমা । যে দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি,—পৃথিবীর মৃত্তিকা ; দীর্ঘ, প্রস্থ, বেধ ; স্বাদ, ভ্রাণ, স্পর্শ ; আরম্ভ, স্থিতি ও অবসান। মানুষের মন কোথায় গিয়া বিশ্রাম করিবে ? এমন ঠাই কোথায় মিলিবে, যেখানে জড়দেহ পোষণের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা নাই, এক মুঠ জাহারের জন্য লক্ষ লক্ষ জাকৃত্তিধারীর কোলাহল নাই, যেখানকার ভূমি ও