পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমালোচনা 2〉》○ আমার আস্তর যেমন করিছে তেমনি হউক সে ! যাহার লাগিয়া সব তেয়াগিকু লোকে অপযশ কয়, সেই গুণনিধি ছাড়িয়া পিরীতি আর জানি কার হয় ! যুবতী হইয়া হাম ভাঙ্গাইয়া এমতি করিল কে ? আমার পরাণ যেমতি করিছে সেমতি হউক্ সে !” “আমার পরাণ যেমতি করিছে তেমতি হউক সে ” এই কথাটার মধ্যে কতটা কথা আছে । রাধা সমস্ত বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডে আর অভিশাপ খুজিয়া পাইল না । শত সহস্র অভিশাপের পরিবর্তে সে কেবল একটি কথা কহিল । সে কহিল, “আমার পরাণ যেমন করিছে, তেমনি হউক সে!” ইহাতেই বুঝিতে পারিয়াছি রাধার পরাণ কেমন করিতেছে । ঐ এক “যেমন করিছে” শব্দের মধ্যে নিদারুণ কষ্ট প্রচ্ছন্ন আছে, সে কষ্ট বর্ণনা না করিলে যতটা বর্ণিত হয়, এমন আর কিছুতে না। উপরি-উক্ত পদটির মধ্যে রাধা দুইবার অভিশাপ দিতে গিয়াছে, কিন্তু উহার অপেক্ষা গুরুতর অভিশাপ সে আর কোন মতে খুজিয়া পাইল না । ইহাতেই রাধার সমস্ত হৃদয় দেখিতে পাইলাম। বিদ্যাপতি স্বখের কবি, চণ্ডিদাস দুঃখের কবি। বিদ্যাপতি বিরহে কাতর হইয়া পড়েন, চণ্ডিদাসের মিলনেও সুখ নাই । বিদ্যাপতি জগতের মধ্যে প্রেমকে সার বলিয়া জানিয়াছেন, চণ্ডিদাস প্রেমকেই জগৎ বলিয়া জানিয়াছেন । বিদ্যাপতি ভোগ করিবার কবি, চণ্ডিদাস সহ করিবার কবি। চণ্ডিদাস মুখের মধ্যে দুঃখ ও দুঃখের মধ্যে সুখ দেখিতে পাইয়াছেন । র্তাহার স্বখের মধ্যেও ভয় এবং দুঃখের প্রতিও অনুরাগ । বিদ্যাপতি কেবল জানেন যে মিলনে মুখ ও বিরহে দুঃখ, কিন্তু চণ্ডিদাসের হৃদয় আরো গভীর, তিনি উহা অপেক্ষ আরো অধিক জানেন । র্তাহার প্রেম, “কিছু কিছু স্বধী, বিষগুণা আধ,” তাহার কাছে খাম যে মুরলী বাজান, তাহাও "বিষামৃতে একত্র করিয়া ।” "কহে চণ্ডিদাস, শুন বিনোদিনী, মুখ দুখ দুটি ভাই, 3 &