পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>२8 ... • রবীন্দ্র-রচনাবলী

  • /

করিয়া গোটাকতক ছত্র মিলাইয়া দিয়াছেন। আমার বোধ হয়, যেন বিদ্যাপতি কৃষ্ণ হইয়া রাধার রূপ উপভোগ করিতে পারিয়াছেন, কিন্তু রাধা হইয়া কৃষ্ণের রূপ উপভোগ করিতে পারেন নাই । বিদ্যাপতির যে কবিতাটি উদ্ধৃত করিয়াছি, উহা ব্যতীত প্রাচীন কাব্য সংগ্রহে বিদ্যাপতি-রচিত আর একটি মাত্র কৃষ্ণের রূপবর্ণনা আছে, তাহাও অতি যৎসামান্ত । বসন্তরায়ের কৃষ্ণের বর্ণনা পড়িয়া দেখ। কবি এমনি ভাবে মুগ্ধ হইয়া গাহিয়া উঠিয়াছেন যে, প্রথম ছত্র পড়িয়াই আমাদের প্রাণের তার বাজিয়া ওঠে। “সজনি, কি হেরমু ও মুখ-শোভা ।” খামকে দেখিবামাত্রই যে বন্যার মত এক সৌন্দর্য্যের স্রোত রাধার মনে আসিয়া পড়িয়াছে, রাধার হৃদয়ে সহসা যেন একটা সৌন্দর্য্যের আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে—একেবারে সহসা অভিভূত হইয়া রাধা বলিয়া উঠিয়াছে—“সজনি, কি হেরমু ও মুখ-শোভা !” আমরা রাধার সেই সহসা উচ্ছ্বসিত ভাব প্রথম ছত্রেই অনুভব করিতে পারিলাম । শু্যামকে দেখিবামাত্রই তাহার প্রথম মনের ভাব মোহ । প্রথম ছত্রে তাহাই প্রকাশ পাইতেছে । ইহার সমস্তটা আপ্লুত করিয়া একটা সৌন্দর্য্যের ভাব মাত্র বিরাজ করিতেছে । রাধা মাঝে মাঝে রূপ বর্ণনা করিতে চেষ্টা করিয়াছেন, কিন্তু মনঃপূত না হওয়ায় ছাড়িয়া দিয়াছেন, বলিয়াছেন— “রূপ বরণিক কত ভাবিতে থকিত চিত ।” তাহার রূপ কেমন তাহা অামি কি জানি, তাহার রূপ দেখিয়া আমার চিত্ত কেমন হইল, তাহাই আমি জানি । রাধ মাঝে মাঝে বর্ণনা করিতে যায়, অমনি বুঝিতে পারে, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বর্ণনা করিলে খুব অল্পই বলা হয়, আমি যে কি আনন্দ পাইতেছি, সেটা তাহাতে কিছুতেই ব্যক্ত হয় না। শু্যামের রূপের আকৃতি ত সজনির সকলেই দেখিতে পাইতেছে, কিন্তু রাধা যে সেই রূপের মধ্যে আরো অনেকটা দেখিতে পাইয়াছে, যাহা দেখিয়া তাহার মনে কথার অতীত কথা সকল জাগিয়া উঠিয়াছে সেই অধিক-দেখাটা ব্যক্ত করিবে কিরূপে ? সে কি তিল তিল বর্ণনা করিয়া ? বর্ণনা করিতে চেষ্টা করিয়া হতাশ হইয়া বর্ণনা বন্ধ করিয়া কেবল ভাবগুলি মাত্র ব্যক্ত করিতে হয়। হাসি বর্ণনা করিতে গিয়া “হাসিখানি” বলিতে হয়, রূপ বর্ণনা করিতে গিয়া মুরলীর গান মনে পড়ে। স্যামের ভাব— রূপেতে হাসিতে গানেতে জড়িত একটি ভাব, পৃথক পৃথক্ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমষ্টিগত একটি ভাব নহে। রাধা যে বলিয়াছেন, “হেরইতে চাদমুখ মরমে পরম মুখ” ঐ কথাটাই সত্য, নহিলে “ভুরু বাকা’ বা “চোখ টানা” বা “নাক সোজা” ও সব কথা কোন কাজের কথাই নয়। বিদ্যাপতি-রচিত রূপবর্ণনার সহিত বসন্তরায়-রচিত রূপবর্ণনার একটি বিশেষ প্রভেদ আছে । বিদ্যাপতি রূপকে একরূপ চক্ষে দেখিতেছেন, আর বসন্তরায় তাহাকে আর