পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ses , " রবীন্দ্র-রচনাবলী অনেকে আপনাদিগকে বিজ্ঞ Practical বলিয়া পরিচয় দিয়া থাকেন। তাহারা এমন প্রকাশ করেন যে, মিথ্যা কথা বলা মন্দ, কিন্তু Political উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলিতে দোষ নাই । সত্য ঘটনা বিকৃত করিয়া বলা উচিত নহে, কিন্তু তাহা করিলে যদি কোন ইংরাজ অপদস্থ হয় তবে তাহাতে দোষ নাই কপটতাচরণ ধৰ্ম্ম-বিরুদ্ধ, কিন্তু দেশের আবশ্বক বিবেচনা করিয়া বৃহৎ উদ্দেশ্বে কপটতাচরণ অন্যায় নহে। কিন্তু বৃহৎ কাহাকে বল ! উদ্দেশ্য যতই বৃহৎ হউক না কেন, তাহা অপেক্ষা বৃহত্তর উদ্দেশু আছে। বৃহৎ উদ্দেশু সাধন করিতে গিয়া বৃহত্তর উদেশ্ব ধ্বংস হইয়া যায় যে ! হইতেও পারে, সমস্ত জাতিকে মিথ্যাচরণ করিতে শিখাইলে আজিকার মত একটা সুবিধার সুযোগ হইল— কিন্তু তাহাকে যদি দৃঢ় সত্যাকুরাগ শিখাইতে তাহা হইলে সে যে চিরদিনের মত মানুষ হইতে পারিত ! সে যে নিৰ্ভয়ে মাথা তুলিয়া দাড়াইতে পারিত, তাহার হৃদয়ে যে অসীম বল জন্মাইত। তাহা ছাড়া, সংসারের কার্য্য আমাদের অধীন নহে । আমরা যদি কেবলমাত্র একটি সূচি অনুসন্ধান করিবার জন্য দীপ জ্বালাই সে সমস্ত ঘর আলো করিবে, তেমনি আমরা যদি একটি সূচি গোপন করিবার জন্য আলো নিবাইয়া দিই, তবে তাহাতে সমস্ত ঘর অন্ধকার হইবে । তেমনি আমরা যদি সমস্ত জাতিকে কোন উপকার সাধনের জন্য মিথ্যাচরণ শিখাই তবে সেই মিথ্যাচরণ যে আমার ইচ্ছার অমুসরণ করিয়া কেবলমাত্র উপকারটুকু করিয়াই অন্তৰ্হিত হইবে তাহা নহে, তাহার বংশ সে স্থাপনা করিয়া যাইবে । পূর্বেই বলিয়াছি বৃহত্ত্ব একটি মাত্র উদ্দেশ্যের মধ্যে বদ্ধ থাকে না,তাহার দ্বারা সহস্র উদ্দেশু সিদ্ধ হয় । সূৰ্য্যকিরণ উত্তাপ দেয়, আলোক দেয়, বর্ণ দেয়, জড় উদ্ভিদ পশু পক্ষী কীট পতঙ্গ সকলেরই উপরে তাহার সহস্র প্রকারের প্রভাব কাৰ্য্য করে ; তোমার যদি এক সময়ে খেয়াল হয় যে পৃথিবীতে সবুজ বর্ণের প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত অধিক হইয়াছে, অতএব সেটা নিবারণ করা আবশ্বক ও এই পরম লোকহিতকর উদ্দেশে যদি একটা আকাশ-জোড়া ছাতা তুলিয়া ধর তবে সবুজ রং তিরোহিত হইতেও পারে কিন্তু সেই সঙ্গে লাল রং নীল রং সমুদয় রং মারা যাইবে, পৃথিবীর উত্তাপ যাইবে আলোক যাইবে, পশু পক্ষী কীট পতঙ্গ সবাই মিলিয়া সরিয়া পড়িবে। তেমনি কেবলমাত্র Political উদ্দেশ্যেই সত্য বদ্ধ নহে। তাহার প্রভাব মনুষ্য-সমাজের অস্থি মজার মধ্যে সহস্ৰ আকারে কার্য্য করিতেছে—একটি মাত্র উদ্দেশ্য-বিশেষের উপযোগী করিয়া যদি তাহার পরিবর্তন কর, তবে সে আর আর শত সহস্র উদ্দেশ্বের পক্ষে অনুপযোগী হইয়| উঠিবে। যেখানে যত সমাজের ধ্বংস হইয়াছে এইরূপ করিয়াই হইয়াছে। যখনই মতিভ্রমবশতঃ একটি সঙ্কীর্ণ হিত সমাজের চক্ষে সৰ্ব্বেসৰ্ব্বা হইয়া উঠিয়াছে, এবং অনন্ত হিতকে সে তাহার নিকটে বলিদান দিয়াছে,