পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মন্ত্রি অভিষেক।

 আমি যে বিষয় উত্থাপন করিতে প্রবৃত্ত হইতেছি তাহা আপনা হইতেই অনেক দূর পর্য্যস্ত অগ্রসর হইয়াছে। শ্রোতৃবর্গের মধ্যে এমন কেহই নাই যাহাকে এ সম্বন্ধে কিছু নূতন কথা বলিতে পারি বা যাঁহাকে প্রমাণ প্রয়োগ পূর্ব্বক কিছু বুঝান আবশ্বক। আমরা সকলেই এক মত। আমার কর্ত্তব্য কেবল উপস্থিত সকলের হইয়া সেই মত ব্যক্ত করা; সেই জন্যই সাহস-পূর্বক আমি এখানে দণ্ডায়মান হইতেছি। নতুবা জটিল রাজনৈতিক অরণ্যের মধ্যে সরল পথ কাটিয়া বাহির করা আমার মত নিতান্ত অব্যবসায়ী লোকের ক্ষুদ্র ক্ষমতার অতীত।

 বিষয়টা আপাতত যেরূপ আকার ধারণ করিয়াছে তাহ আমার নিকটেও তেমন দুর্ব্বোধ ঠেকিতেছে না। আমাদের শাসনকর্ত্তারা স্থির করিয়াছেন মন্ত্রীসভায় আরো গুটিকতক ভারতবর্ষীয় লোক নিযুক্ত করা যাইতে পারে। এখন কথাটা কেবল এই দাড়াইতেছে, নির্বাচন কে করিবে? গবর্ণমেণ্ট করিবেন, না আমরা করিব?

 মীমাংসা করিবার পূর্ব্বে সহজ-বুদ্ধিতে এই প্রশ্ন উদয় হয়, কাহার স্থবিধার জন্য এই নির্ব্বাচনের আবগুক হইয়াছে?

 আমাদেরই সুবিধার জন্য। কারণ ভরসা করিয়া বলিতে পারি এমন অবিশ্বাসী এ সভায় কেহই নাই যিনি বলিবেন ভারতের উন্নতিই ভারতশাসনের মুখ্য লক্ষ্য নহে। অবশ্য ইংরাজের ইহাতে আনুষঙ্গিক লাভ নাই এমন কথাও বলা যায় না। কিন্তু নিজের স্বার্থকেই যদি ইংরাজ ভারতশাসনের প্রধান উদ্দেশ্য করিতেন তবে আমাদের এমন দুর্দশা হইত যে ক্রন্দন করিবারও অবসর থাকিত না। তবে কি আশা লইয়া আজ আমরা এখানে সমবেত হইতাম! তবে আকাঙ্ক্ষার লেশমাত্র আমাদের মনে উদয় হইবার বহু পূর্বেই বিলাতের নির্ম্মিত কঠিন পাদুকার তলে তাহ নিরঙ্কুর হইয়া লোপ পাইত। १ এ পর্য্যস্ত কখনো কখনো দৈববশতঃ দুর্ঘটনাক্রমে উক্ত মর্ম্মঘাতী চর্ম্মখণ্ডের তাড়নে আমাদের জীর্ণ প্লীহা বিদীর্ণ হইয়াছে মাত্র কিন্তু আমাদের শীর্ণ আশালতা ক্রমশঃ সজীব হইয়া উন্নতি-দণ্ড আশ্রয়পূর্বক সফলতালাভের দিকে অগ্রসর হইতেছে, তাহার প্রতি ইহার আক্রোশ কার্ধ্যে স্পষ্টতঃ প্রকাশ পায় নাই।