পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SVN9 রবীন্দ্র-রচনাবলী করিবার অবসর কোথায় ? অতএব যখন যুদ্ধগৌরবের দ্বার রুদ্ধ, তখন কি স্বভাবতঃই জাতীয় রাজনৈতিক গৌরবের প্রতি র্তাহাদের হৃদয় আকৃষ্ট হইবে না ? যদি স্বতঃ না হয় তবে যে কোন উপায়ে হৌক জাতিস্বভাবসুলভ যুদ্ধলালসা হইতে র্তাহাদের চিত্তকে বিক্ষিপ্ত করিয়া রাজ্যচালন ও শাস্তিকার্ষ্যের মধ্যে র্তাহাদের গৌরব-স্পৃহা চরিতার্থ করিতে দিবার চেষ্টা করা কি রাজপুরুষেরা উচিত জ্ঞান করেন না ? পূৰ্ব্ব এবং পশ্চিম যদিও বিপরীত দিক তথাপি প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য মানবপ্রকৃতি সম্পূর্ণ বিরোধীধৰ্ম্মাবলম্বী নহে। তাহা যদি হইত তবে ইংরাজি শিক্ষা, ইংরাজি শাসনপ্রণালী এদেশে মরুভূমিতে বীজ বপনের ন্যায় আদ্যোপাস্ত নিস্ফল হইত। বিরোধীপক্ষীয়েরা হয়ত অবিশ্বাস করিবার মৌখিক ভান করিবেন তথাপি এ কথা আমরা বলিব, যে, যদিও আমরা প্রাচ্য এবং তোমাদের সাহায্য ব্যতীত জাতীয় গৌরব উপার্জন করিতে অক্ষম হইয়াছি তথাপি কোন অধিকার গৌরবের এবং কোন নিষেধ অপমানের তাহা আমাদের প্রাচ্য হৃদয়েও অনুভব করিতে পারি। আমাদের মানবপ্রকৃতির এত দূর পর্য্যস্ত বিকার হয় নাই যে, তোমরা যখন মহৎ অধিকার আমাদের হস্তে তুলিয়া দিবে তখন আমরা অসন্তুষ্ট হইব ! আমাদের জাতিধৰ্ম্ম সহিষ্ণুতাকে তোমরা সম্যক অসাড়ত বলিয়া ভ্রম কর, তাহার কারণ তোমরা আমাদের সুখদুঃখবিরাগঅনুরাগপূর্ণ অস্তঃকরণের মধ্যে প্রবেশ করা অনাবশ্যক জ্ঞান করিয়া আসিতেছ। যদিও আমরা দুর্ভাগ্যক্রমে চিরকাল যথেচ্ছাচারী শাসনতন্ত্রের মধ্যে বাস করিয়া আসিতেছি, তথাপি মানব-সাধারণের অন্তর্নিহিত স্বাধীনতা-প্রীতির মৃত্যুঞ্জয়ী বীজ আমাদের হৃদয়ে এখনো সম্পূর্ণ নিৰ্জ্জীব হয় নাই । আর কিছু না হৌক তোমাদের নিকটে আমাদের বেদনা, আমাদের অভাব জানাইবার অধিকার আমাদের হস্তে সমর্পণ করিলে অধিকতর সুখ-সন্তোষের কারণ হইবে এটুকু আমরা পূৰ্ব্বদিকে বাস করিয়াও এক রকম বুঝিতে পারি। অপেক্ষাকৃত পশ্চিমবাসী যোদ্ধজাতীয়দের মানসিক প্রকৃতি যে এ বিষয়ে আমাদের হইতে কিছুমাত্র পৃথক তাহাও মনে করিতে পারি না । অতএব দুঃখনিবেদনের স্বাধীন অধিকার পাইলে ভারতবর্ষ যে অসন্তুষ্ট হইবে ইংলণ্ডবাসী ভারতহিতৈষীগণকে এরূপ গুরুতর দুশ্চিন্তা হইতে ক্ষান্ত থাকিতে অনুরোধ করিতে পারি ! অথচ সন্তোষ উদ্রেকের জন্য বেশি যে কিছু করিতে হইবে তাহাও নহে। যদি কর্তৃপক্ষেরা বলিতেন তোমরা মন্ত্রিসভায় বসিবার একেবারেই যোগ্য নও, অতএব মিছে কানের কাছে বকিয়ে না। তাহা হইলে আমরা ধমকটি খাইয়া শুল্কমুখে আস্তে আস্তে বাড়ি ফিরিয়া যাইতাম ।