পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মন্ত্রি অভিষেক هوهنه কিন্তু গোড়াকার প্রধান কঠিন সমস্যার মীমাংসা হইয়া গিয়াছে। তোমাদের রাজতক্তের পাশ্বে আমাদিগকে স্থান দিয়া সম্মানিত করিয়াছ ; আরো লোক বাড়াইতে চাও । তোমাদের শাসনতন্ত্রের মধ্যে অনেক বড় বড় পদেও আমাদিগকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছ । আমাদের যোগ্যতার প্রতি যে তোমাদের আন্তরিক বিশ্বাস আছে তাহার সহস্র পরিচয় দিয়াছ। তোমরা আপনা হইতে স্বেচ্ছাপূর্বক আমাদিগকে যে সকল উচ্চ অধিকার দিয়াছ, যে উন্নতিমঞ্চে আরোপণ করিয়াছ, তাহ আমাদের পচিশ বৎসর পূৰ্ব্বেকার স্বপ্নেরও অগম্য। আজ আমরা অস্তরের মধ্যে আত্মগৌরব অনুভব করিয়া আত্মবিশ্বাসের সহিত আমাদের লব্ধ অধিকার ঈষৎ বিস্তৃত করিবার প্রার্থনা করিতেছি বলিয়া কেন বিমুখ হইতেছ ? আমাদের মধ্যে যে যোগ্যতা আছে তাহ প্রমাণ করিবার অবসর ত তোমরাই দিয়াছ । আমাদের প্রতি তোমরা যখন জেলা শাসনের ভার দিলে তখনই আমরা নিজে জানিলাম যে আমরা শাসনভার লইবার যোগ্য, তোমরা যখন আমাদিগকে সৰ্ব্বোচ্চ বিচারাসনে স্থান দিলে তখন আমরা আপনারাই দেখিলাম আমরা সে গুরুতর কাৰ্য্যভার ও উচ্চতর সম্মানের অধিকারী ; তোমরা যখন ভারতীয় রাজকাৰ্য্যের পরামর্শের জন্য আমাদিগকে আহবান করিলে তখন আমরা প্রমাণ পাইলাম এই বিপুল রাজ্যচালনকার্য্যে আমাদের অভিজ্ঞতাও উপেক্ষণীয় নহে। এইরূপে ক্রমে ক্রমে আমাদূের আত্মবিশ্বাস জাগ্ৰত করিয়া, আমাদের আশা উদ্রেক করিয়া আজ আমাদের শিক্ষা, আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহকে কোন মুখে নিস্ফল করিবে ? যখন প্রার্থনা করি নাই, এবং রাজশক্তির নিকট প্রার্থনা করিবার উপায় মাত্র জানিতাম না, তখন তোমরা আমাদের উচ্চ-অধিকারের ঘোষণাপত্র প্রচার করিয়াছ । কিন্তু তদনুরূপ কাৰ্য্য হয় নাই, তাহা তোমরাও স্বীকার করিতেছ এবং আমরাও অনুভব করিতেছি। এক প্রকার উচ্ছ স্থল বদান্ততা আছে যাহা সহসা স্বতঃউৎসারিত উচ্ছ্বাস-প্রাচুর্য্যে মুক্তহস্ত হইয়া উঠে, কিন্তু স্বহস্তরচিত ঋণপত্র বা প্রতিশ্রুতি লিপি দেখিলে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র মূৰ্ত্তি ধারণ করে, যাহা আকস্মিক আবেগে বৃহৎ অঙ্গীকারে জড়িত হয় এবং অবশেষে ন্যায্য উপায়ব্যতীত অন্যান্য সকল প্রকার ছলে বলে সেই স্বেচ্ছাকৃত অঙ্গীকারপাশ হইতে মুক্তি লাভ করিতে চেষ্টা করে। দেখা যাইতেছে, তোমরা স্বেচ্ছাপূর্বক আমাদিগকে বৃহৎ অধিকার দিতে স্বীকার করিয়াছ এবং কিছু কিছু দিয়াছ। কিন্তু তোমাদের প্রতিজ্ঞাপত্রের আশ্বাস-অনুসারিণী অধিকারপ্রার্থনাকে তোমরা রাজভক্তির অভাব বলিয়া অত্যন্ত উষ্ণতা প্রকাশ কর । কিন্তু মনে মনে কি জান না ইহাতেই যথার্থ রাজভক্তি প্রকাশ পায় ?