পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী پامbلا তাহার অশিক্ষা-বাধা দূর করিয়া দিবামাত্র যখনি সে বাল্মীকির কাব্যের যথার্থ পরিচয় পাইরে তখনি সে স্বভাবতই মানবপ্রকৃতির নিজগুণেই গ্রাম্য পাচালি অপেক্ষা বাল্মীকির কাব্যকে রমণীয় বলিয়া জ্ঞান করিবে । তেমনি যে ঋষি ব্রহ্মের অমৃভরস জাস্বাদন করিয়াছেন, যিনি তাহাকে পৃথিবীর অন্য সকল হইতেই প্রিয় বলিয়া জানিয়াছেন, তিনি ইহা সহজেই বুৰিয়াছেন যে ব্ৰহ্ম স্বভাবতই আত্মার পক্ষে সৰ্ব্বাপেক্ষা প্রতিদায়ক—ব্রহ্মের প্রকৃত পরিচয় পাইবামাত্র আত্মা স্বভাবতই র্তাহাকে পুত্র, বিত্ত, ও অন্য সকল হইতেই প্রিয়তম বলিয়া বরণ করে । ব্রহ্মের সহিত এই পরিচয় যে কেবল আত্মার আনন্দ সাধনের জন্য তাহ নহে, সংসারযাত্রার পক্ষেও তাহা না হইলে নয় । ব্রহ্মকে যে ব্যক্তি বৃহৎ বলিয়া না জানিয়া সংসারকেই বৃহৎ বলিয়া জানে সংসারযাত্রা সে সহজে নিৰ্বাহ করিতে পারে না,–সংসার তাহাকে রাক্ষসের ন্যায় গ্রাস করিয়া নিজের জঠরানলে দগ্ধ করিতে থাকে ! এই জন্য ঈশোপনিষদে লিখিত হইয়াছে— ঈশ বাস্তমিদং সৰ্ব্বং যৎকিঞ্চ জগত্যাং জগৎ— ঈশ্বরের দ্বারা এই জগতের সমস্ত যাহা কিছু আচ্ছন্ন জানিবে এবং— তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথ মা গৃধঃ কস্যস্বিন্ধনং র্তাহার দ্বারা যাহা দত্ত, যাহা কিছু তিনি দিতেছেন তাহাই ভোগ করিবে পরের ধনে লোভ করিবে না । সংসারযাত্রার এই মন্ত্র । ঈশ্বরকে সৰ্ব্বত্র দর্শন করিবে, ঈশ্বরের দত্ত আনন্দ-উপকরণ উপভোগ করিবে, লোভের দ্বারা পরকে পীড়িত করিবে না । যে ব্যক্তি ঈশ্বরের দ্বারা সমস্ত সংসারকে আচ্ছন্ন দেখে সংসার তাহার নিকট একমাত্র মুখ্যবস্তু নহে—সে যাহা ভোগ করে তাহা ঈশ্বরের দান বলিয়া ভোগ করে— সেই ভোগে সে ধৰ্ম্মের সীমা লঙ্ঘন করে না—নিজের ভোগমত্ততায় পরকে পীড়া দেয় না । সংসারকে যদি ঈশ্বরের দ্বারা আবৃত না দেখি, সংসারকেই যদি একমাত্র মুখ্য লক্ষ্য বলিয়া জানি তবে সংসারস্থখের জন্য আমাদের লোভের অস্ত থাকে না, তবে প্রত্যেক তুচ্ছ বস্তুর জন্য হানাহানি কাড়াকড়ি পড়িয়া যায়, দুঃখ হলাহল মথিত হইয় উঠে । এই জন্য সংসারীকে একান্ত নিষ্ঠার সহিত সৰ্ব্বব্যাপী ব্রহ্মকে অবলম্বন করিয়৷ থাকিতে হইবে—কারণ সংসারকে ব্রহ্মের দ্বারা বেষ্টিত জানিলে এবং সংসারের সমস্ত ভোগ ব্রহ্মের দান বলিয়া জানিলে তবেই কল্যাণের সহিত সংসারযাত্রা নিৰ্বাহ সম্ভব হয় ।