পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२ % , রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রত্যেক কাৰ্য্য অনন্ত জগতের লক্ষকোটি স্নায়ুর মধ্যে তরঙ্গিত হইতেছে। একটি বালুকণা যদি কেহ ধ্বংস করিতে পারে তবে নিখিল ব্ৰহ্মাণ্ডের পরিবর্তন হইয়া যায়। তুমি স্বার্থপরভাবে বিদ্যা উপার্জন ও মনের উন্নতি সাধন করিলে, কিন্তু জানিতেও পারিলে না, সে বিদ্যার ও সে উন্নতির লক্ষকোটি উত্তরাধিকারী আছে। তুমি দাও না-দাও তোমার সস্তানশ্রেণীর মধ্যে সে উন্নতি প্রবাহিত হইবে । তোমার আশেপাশে চারিদিকে সে উন্নতির ঢেউ লাগিবে। তুমি ত দুই দিনে পৃথিবী হইতে সরিয়া পড়িবে, কিন্তু তোমার জীবনের সমস্তটাই পৃথিবীর জন্য রাখিয়া যাইতে হইবে—তুমি মরিয়া গেলে বলিয়া তোমার জীবনের এক মুহূৰ্ত্ত হইতে ধরণীকে বঞ্চিত করিতে পারিবে না, প্রকৃতির আইন এমনি কড়াক্কড় । সচেতন ধৰ্ম্ম । অতএব এ জগতে স্বার্থপর হইবার যো নাই। পরার্থপরতাই এ জগতের ধৰ্ম্ম । এই নিমিত্তই মানুষের সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট ধৰ্ম্ম পরের জন্য আত্মোৎসর্গ করা । জগতের ধৰ্ম্ম আমাদিগকে আগে হইতেই পরের জন্য উৎকৃষ্ট করিয়া রাখিয়াছে, সে বিষয়ে আমরা জগতের জড়াদপি জড়ের সমতুল্য। কিন্তু আমরা যখন স্বেচ্ছায় সচেতনে সেই মহাধৰ্ম্মের অনুগমন করি তখনই আমাদের মহত্ত্ব, তখনই আমরা জড়ের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । কেবল তাহাই নয়, তখনই আমরা মহৎ সুখ লাভ করি । তখনই আমরা দেখিতে পাই যে, স্বার্থপরতায় সমস্ত জগৎকে এক পাশ্বে ঠেলিয়া তাহার স্থানে অতি ক্ষুদ্র আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করিতে চাই । কিন্তু পারিব কেন ? অহৰ্নিশি অশাস্তি অসুখ, হৃদয় ক্লান্ত হইয়া পড়ে, কিছুতেই তাহার আরাম থাকে না। যতই সে উপার্জন করিতে থাকে, যতই সে সঞ্চয় করিতে থাকে, ততই তাহার ভার বৃদ্ধি হইতে থাকে মাত্র। কিন্তু যখনি আপনাকে ভুলিয়া পরের জন্য প্রাণপণ করি তখনি দেখি মুখের সীমা নাই । তখনি সহসা অনুভব করিতে থাকি, সমস্ত জগৎ আমার স্বপক্ষে । আমি ছিলাম ক্ষুদ্র, হইলাম অত্যন্ত বৃহৎ । চন্দ্র সুৰ্য্যের সহিত আমার বন্ধুত্ব হইল । জগৎ স্রোতে ভেসে চল ষে যেথা আছ ভাই, চলেছে যেথা রবিশশি চল রে সেথা যাই ! ।