পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলোচনা 8X গ্রহণ করিতে পারে, আর কিছুই না । মানুষের জীবনীশক্তিও কিছুতেই আপনাকে উদ্ভিদ-শরীরের মধ্যে ব্যক্ত করিতে পারে না । সে নিজের চারিদিকে এমন সকল পদার্থই সঞ্চয় করিতে পারে যাহা তাহার নিজের প্রকাশের পক্ষে সৰ্ব্বাপেক্ষ অমুকুল । মনের মধ্যে একটা পাপের সঙ্কল্প তাহার চারিদিকে সহস্ৰ পাপের সঙ্কল্প আকর্ষণ করিয়া আপনাকে আকারবদ্ধ করিয়া তুলে ও প্রতিদিন বৃহৎ হইতে থাকে। পুণ্য সঙ্কল্পও সেইরূপ । সজীবতার ইহাই লক্ষণ । আমরা যখন একটি প্রবন্ধ লিখি, তখন কিছু সেই প্রবন্ধের প্রত্যেক ভাব প্রত্যেক কথা ভাবিয়া লিখিতে বসি না । একটা মুখ্য সজীব ভাব যদি আমার মনে আবির্ভূত হয়, তবে সে নিজের শক্তি-প্রভাবে আপনার অনুকূল ভাব ও শব্দগুলি নিজের চারিদিকে গঠিত করিতে থাকে। আমি যে সকল ভাব কোন কালেও ভাবি নাই, তাহাদিগকেও কোথা হইতে আকর্ষণ করিয়া আনে। এইরূপে সে একটি পরিপূর্ণ প্রবন্ধ আকার ধারণ করিয়া আপনাকে আপনি মানুষ করিয়া তুলে । এই জন্য, প্রবন্ধের মৰ্ম্মস্থিত মুখ্য ভাবটি যত সজীব হয় প্রবন্ধ ততই ভাল হয় ; নিৰ্জ্জীব ভাব আপনাকে আপনি গড়িতে পারে না, বাহির হইতে তাহার কাঠামো গড়িয়া দিতে হয়। এই নিমিত্ত ভাল লেখা লেখকের পক্ষেও একটি শিক্ষা । তিনি যতই অগ্রসর হইতে থাকেন ততই নূতন জ্ঞান লাভ করিতে থাকেন। আত্মার সীমা । আমার মনে হয়, মানুষের আত্মাও এইরূপ ভাবের মত। ভাব নিজেকে ব্যক্ত করিতে চায়। যে-টি তাহার নিজের সর্বশ্রেষ্ঠ বাহ বিকাশ তাহাই আশ্রয় করিতে করিতেই তাহার ক্রমাগত পুষ্টিসাধন হয় । আমরা মনের মধ্যে যাহা অনুভব করি, কাৰ্য্যই তাহার বাহ প্রকাশ । এই জন্য আমাদের অধিকাংশ অনুভব কাজ করিবার জন্য ব্যাকুল, আবার, কাজ যতই সে করিতে থাকে ততই সে বাড়িয়া উঠিতে থাকে। আমাদের আত্মাও সেইরূপ সৰ্ব্বাপেক্ষ অনুকূল অবস্থায় নিজেকে প্রকাশ করিতে চায় । এবং সেই প্রকাশ-চেষ্টারূপ কার্য্যেতেই তাহার উত্তরোত্তর পুষ্টিসাধন হইতে থাকে। চারিদিকের বাতাস হইতে সে আপনার অনুরূপ ভাবন কামনা প্রবৃত্তি আকর্ষণ করিয়া নিজের আবরণ নিজের সীমা নিজে রচনা করিতে থাকে। অবশিষ্ট আর কিছুরই উপরে তাহার কোন প্রভুত্ব নাই । আমরা সকলেই বন্ধু বান্ধব ও অবস্থার দ্বারা বেষ্টিত হইয়া একটি যেন ডিম্বের মধ্যে বাস করিতেছি, ঐটুকুর মধ্য হইতেই আমাদের উপযোগী খাদ্য শোষণ করিতেছি । একটি ব্যক্তিবিশেষকে যখন আমরা দেখি, তখন