পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আলোচনা 8ළු ও খাম-খুনীর মধ্যে এই খুন সম্বন্ধেই এমন আকাশ পাতাল প্রভেদ, যে, উভয়কে এক নাম দিলে বুঝিবার স্থবিধা হওয়া দূরে থাকুক, বুঝিবার ভ্রম হয়। আমরা প্রত্যহ আমাদের কাছের লোকদিগকে এইরূপে ভুল বুঝি। তাড়াতাড়ি তাহাদের এক-একটা নামকরণ করিয়া ফেলি ও সেই নামের কৃত্রিম খোলসটার মধ্যেই সে ব্যক্তি ঢাকা পড়িয়া যায়। অনেক সময়ে মানুষ অনুপস্থিত থাকিলেই তাহাকে ঠিক জানিতে পারি। কারণ, সকল মানুষই বৃহৎ । বৃহৎ জিনিষকে দূর হইতে দেখিলেই তাহার সমস্তটা দেখা যায়, কিন্তু তাহার অত্যন্ত কাছে লিপ্ত থাকিয়া দেখিলে তাহার খানিকটা অংশ দেখা যায় মাত্র, সেই অংশকেই সমস্ত বলিয়া ভ্রম হয় । মানুষ অনুপস্থিত থাকিলে আমরা তাহার দুই চারি বর্তমান মুহূৰ্ত্ত মাত্র দেখি না, যতদিন হইতে তাহাকে জানি, ততদিনকার সমষ্টিস্বরূপে তাহাকে জানি । সুতরাং সেই জানাটাই অপেক্ষাকৃত যথার্থ। পৃথিবীর অধিবাসীরা পৃথিবীকে কেহ বলিবে উচু, কেহ বলিবে নীচু, কেহ বলিবে উচু-নীচু । কিন্তু যে লোক পৃথিবী হইতে আপনাকে তফাৎ করিয়া সমস্ত পৃথিবীটা কল্পনা করিয়া দেখে, সে এই সামান্য উচুনীচুগুলিকে গ্রাহ না করিয়া বলিতে পারে যে পৃথিবী সমতল গোলক। কথাটা খাটি সত্য নহে, কিন্তু সৰ্ব্বাপেক্ষ সত্য। শ্রেষ্ঠ অধিকার। আত্মার উপরে শ্রেষ্ঠ অধিকার কাহার জন্মিয়াছে ? যে আত্ম-বিসর্জন করিতে পারে । নাবালক যে, তাহার বিষয় আশয় সমস্তই আছে বটে, কিন্তু সে বিষয়ের উপর তাহার অধিকার নাই—কারণ তাহার দানের অধিকার নাই । এই দানের অধিকারই সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ অধিকার । যে ব্যক্তি পরকে দিতে পারে সেই ধনী । যে নিজেও খায় না পরকেও দেয় না কেবলমাত্র জমাইতে থাকে, তাহার নিজের সম্পত্তির উপর কতটুকুই বা অধিকার । যে নিজে খাইতে পারে কিন্তু পরকে দিতে পারে না সেও দরিদ্র—কিন্তু যে পরকে দিতে পারে নিজের সম্পত্তির উপরে তাহার সর্বাঙ্গীণ অধিকার জন্মিয়াছে । কারণ, ইহাই চরম অধিকার । আমাদের পুরাণে যে বলে, যে ব্যক্তি ইহজন্মে দান করে নাই সে পরজন্মে দরিদ্র হইয়া জন্মিবে, তাহার অর্থ এইরূপ হইতে পারে যে, টাকা ত আর পরকালে সঙ্গে যাইবে না, সুতরাং টাকাগত ধনিত্ব বৈতরণীর এপার পর্য্যস্ত। যদি কিছু সঙ্গে যায় ত সে হৃদয়ের সম্পত্তি। যাহার সমস্ত টাকা কেবল নিজের জন্ত—নিজের গাড়িটি ঘোড়াটির জন্যই লাগে, তাহার লাখ টাকা থাকিলেও তাহাকে দরিত্র বলা যায় এই