পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী به هوا § o a “কিন্তু তোমার ঋণ পরিশোধ হইবে, তোমার ক্ষতসকল ঐ শত্রুর বক্ষেই প্রত্যাবৰ্ত্তিত হইবে। হায়, হায়, হায় ! পাৰ্ব্বত্য গৃধিনী তাহার দেহ ভোগ করিবে, এবং দাড়কাক তাহার চক্ষু উৎপাটিত করিয়া ফেলিবে । হায়, হায়, হায় ! তোমার রক্তাক্ত অঙ্গাবরণ তোমার প্রতিশোধকারীদিগের হস্তে অবতীর্ণ হইবে, রোষের বিগ্ৰহস্বরূপে তাহ বংশানুক্রমে রক্ষিত হইতে থাকিবে । হায়, হায়, হায় ! অতএব তুমি তোমার নির্জন সমাধিতে বিশ্রাম লাভ করে, কারণ তোমার হত্যার প্রতিশোধ লইতে বিলম্ব হইবে না । হায়, হায়, হায় ! ই এইরূপই ঘটবে, তোমার হইয় পূরা প্রতিশোধ দেওয়া হইবে।” এই বলিয়া রমণী তাহার উগ্ৰবাক প্রবন্ধ সমাপ্ত করিল এবং শেষের দিকে তাহার চীংকার উচ্চতর ও দীর্ঘতর হইয়া উঠিয়া নাড়ীতে নাড়ীতে যেন স্পন্দন জাগাইয়া তুলিল। তখন স্ক্যাকাটোস-গৃহিণী এক হস্তে হত স্বামীর রক্তাক্ত অঙ্গাবরণ লইয়া এবং অন্য হস্তে যে-শিশুকে তিনি মদের পিপার ভিতরে লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন, সেই নয় বৎসর বয়স্ক ক্ষুদ্র Michele-এর হস্ত ধারণ করিয়া আসিয়া উপস্থিত হইলেন । & o b একবার সেই মৃতদেহের নিশ্চল বিবর্ণ মূৰ্ত্তির দিকে এবং একবার সেই রক্তরঞ্জিত স্মৃতিচিহ্নের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া, এবং ঐ শিশুর ক্লিষ্ট মুখের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে চাহিয়া বলিলেন, “শপথ করে, মিকেল শপথ করে যে, তুমি এই গৰ্হিত কার্য্যের প্রতিশোধ লইবে, স্বৰ্গবাসী সকল সাধুপুরুষের দোহাই যে, যত দিন না দস্থ্যর নিপাত হয়, তত দিন তুমি কোনো আমোদ করিবে না এবং তোমার আত্মা কোনো শাস্তি পাইবে না ; আমি তোমাকে আজ্ঞা করিতেছি, শপথ করে, এবং ঐ শপথ তোমার বয়োবৃদ্ধির সহিত বৰ্দ্ধিত হউক, যত দিন পর্য্যস্ত ঐ ন্যায়াতুমোদিত প্রতিশোধ গ্রহণ করিবার মতো তোমার বাহু বলিষ্ঠ এবং চক্ষু স্থিরলক্ষ্য না হয়।” ঐ বালক খাড়া হইয়া দাড়াইয়া বলিল, “হে আমার পিতা, আমি তোমার মৃত্যুর প্রতিশোধ লইব বলিয়া প্রতিজ্ঞ করিতেছি, সাধুপুরুষগণ আমার সহায় হউন ;” এবং ঐ ভীষণ বাক্য উচ্চারণকালে তাহার বিশাল নয়নদ্বয় বিস্ফারিত এবং তাহার আরক্ত ক্ষুদ্র অধরোষ্ঠ দৃঢ় ও পাণ্ডুবর্ণ হইয়া উঠিল । তাহার শিশুমুখ হইতে যখন এক একটি করিয়া ঐ ভয়ানক কথা বাহির হইতে শুনিলাম, তখন ভিতরে ভিতরে লোমহর্ষণ অনুভব করিলাম।”