পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী 8 ہ طا কালক্রমে যৌবরাজ্য-প্রাপ্ত হইলে, তিনি একদিন জগতের প্রতি অনুকম্পাবশত নির্জনে পিতাকে নিবেদন করিলেন,—“তাত, আমি জানি, এই সংসারে সমস্ত পদার্থই ক্ষণভঙ্গুর ; কিন্তু একমাত্র মহাপুরুষগণের নিৰ্ম্মল যশই কল্পান্ত পৰ্য্যস্ত টিকিয়া থাকে। যদি পরোপকার-জনিত যশ লাভ করিতে পারা যায়, তাহা হইলে উদার ব্যক্তিগণের নিকটে তাহার মতো আর কোন ধন প্রাণাপেক্ষাও অধিক মূল্যবান পরিগণিত হইতে পারে ?” ミ> " “যে সম্পদে পরের উপকার করিতে পারা যায় না, তাহা তো বিদ্যুতের ন্যায় কেবল ক্ষণকালের জন্য লোকচক্ষুর কষ্টই উৎপাদন করিয়া বিলীন হইয়া যায়। অতএব এই যে আমাদের অধিকারে অভিলষিত বস্তুপ্রদ কল্পবৃক্ষ রহিয়াছেন, ইহাকে যদি পরোপকারে লাগাইতে পারা যায়, তাহ হইলে ইহার নিকটে সমস্ত ফল পাওয়া যাইবে । অতএব আমি সেইরূপ উপায় গ্রহণ করিতে চাহি, যাহাতে ইহার ধন দ্বারা প্রার্থী জনসমূহ দারিদ্র্য হইতে মুক্ত হয়।” জীমূতবাহন পিতাকে এই আবেদন জানাইয়া ও র্তাহার অনুজ্ঞা লাভ করিয়া কল্পদ্রুমের নিকটে গমনপূর্বক বলিলেন,— “হে দেব, আপনি সৰ্ব্বদা আমাদিগকে অভীষ্ট ফল দান করিয়া থাকেন। অতএব আজ আপনি আমাদের একটি অভিলাষ পূর্ণ করুন। হে বন্ধু, আপনি এই সমগ্র পৃথিবীর দৈন্য উপশম করুন ! আপনার জয় হউক, আপনি ধনার্থী জগতেরই জন্য প্রদত্ত হইয়াছেন।” সেই ত্যাগশীল কর্তৃক এইরূপে উক্ত হইয়া কল্পদ্রুম ভূতলে প্রচুর স্বর্ণবর্ষণ করিলেন এবং লোকেরা তাহাতে আনন্দিত হইয়া উঠিল ।

  • >b

পূৰ্ব্বকল্পে কাল নামে এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি পুষ্করতীর্থে গমন করিয়া সেখানে দিবারাত্রি মন্ত্র জপ করিতেছিলেন। তাহার জপ করিতে করিতে দেবগণের দুই অযুত বৎসর চলিয়া গেল। তখন তাহার মস্তক হইতে অবিচ্ছিন্ন এক মহৎ জ্যোতি আবিভূতি হইল এবং ইহা দশ সহস্ৰ স্বৰ্য্যের ন্যায় অন্তরীক্ষে উৎসারিত হইয়া সিদ্ধ প্রভৃতির গতিকে রুদ্ধ, ও ত্রিভুবনকে প্রজ্জলিত করিল। তখন ব্রহ্মা, ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতারা আগমন করিয়া কহিলেন—“হে ব্রাহ্মণ, আপনার জ্যোতিতে এই সমস্ত ভুবন দগ্ধ হইতেছে। আপনার যে বর অভিলষিত হয় গ্রহণ করুন।” তিনি র্তাহাদিগকে উত্তর দিলেন—“জপ ভিন্ন অন্যত্র যেন আমার অনুরাগ না হয়, ইহাই আমার বর, আমি অন্য কিছু চাহি না ।”