পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ના ‘ রবীন্দ্র-রচনাবলী

  1. , নিজ দেহ লইয়া আমাদের চোখের সম্মুখে আড়াল করিয়া দাড়ায়, সৌন্দর্ঘ্য তাহ করে না—সৌন্দর্য্যের ভিতর দিয়া আমরা অনন্ত রঙ্গভূমি দেখিতে পাই। এই সৌন্দৰ্য্যবাতায়নে বসিয়া আমরা সুদূর আকাশের নীলিমা দেখি, স্বদুর কাননের সমীরণ স্পর্শ করি, মৃদুর পুষ্পের গন্ধ পাই, স্বর্গের স্বৰ্য্য-কিরণ সেইখান হইতে আমাদের গৃহের মধ্যে প্রবেশ করে। আমাদের গৃহের স্বাভাবিক অন্ধকার দূর হইয়া যায়, আমাদের হৃদয়ের সঙ্কোচ চলিয়া যায়, সেই আলোকে পরস্পরের মুখ দেখিয়া আমরা পরস্পরকে ভাল বাসিতে পারি। এই বাতায়নে বসিয়া অনন্ত আকাশের জন্য আমাদের প্রাণ যেন হা হা করিতে থাকে, দুই বাহু তুলিয়া স্বৰ্য্যকিরণে উড়িতে ইচ্ছা যায়, এই সৌন্দর্ঘ্যের শেষ কোথায় অথবা এই সৌন্দর্ঘ্যের আরম্ভ কোথায়, তাহারই অন্বেষণে স্বদুর দিগন্তের অভিমুখে বাহির হইয়া পড়িতে ইচ্ছা করে, ঘরে যেন আর মন টেকে না। বঁাশীর শব্দ শুনিলে তাই মন উদাস হইয়া যায়, দক্ষিণ বাতাসে তাই মনটাকে টানিয়া কোথায় বাহির করিয়া লইয়া যায়। এসৌন্দৰ্য্যচ্ছবিতে তাই আমাদের মনে এক অসীম আকাজক্ষা উদ্রেক করিয়া দেয় ।

সাড়া । স্বর্গে মর্ত্যে এমনি করিয়াই কথাবার্তা হয়।~সৌন্দর্য্যের প্রভাবে আমাদের হৃদয়ের মধ্যে একটি ব্যাকুলত উঠে, পৃথিবীর কিছুতেই সে যেন তৃপ্তি পায় না। আমাদের হৃদয়ের ভিতর হইতে যে একটি আকুল আকাজক্ষার গান উঠে, স্বর্গ হইতে তাহার যেন সাড়া পাওয়া যায় । সৌন্দর্ঘ্যের ধৈর্য্য। যাহার এমন হয় না, তাহার আজ যদি বা না হয়, কাল হইবেই ! আর-সকলে বলের দ্বারা অবিলম্বে নিজের ক্ষমতা বিস্তার করিতে চায়, সৌন্দৰ্য্য কেবল চুপ করিয়া দাড়াইয়া থাকে আর কিছুই করে না । সৌন্দর্য্যের কি অসামান্ত ধৈৰ্য্য ! এমন কত কাল ধরিয়া প্রভাতের পরে প্রভাত আসিয়াছে, পার্থীর পরে পাখী গাহিয়াছে, ফুলের পরে ফুল ফুটিয়াছে, কেহ দেখে নাই, কেহ শোনে নাই । যাহাদের ইন্দ্রিয় ছিল কিন্তু অতীন্দ্রিয় ছিল না, তাহাদের সম্মুখেও জগতের সৌন্দৰ্য্য উপেক্ষিত হইয়াও প্রতিদিন হাসিমুখে আবিভূত হইত। তাহারা গানের শব্দ শুলিত মাত্র, ফুলের ফোটা দেখিত মাত্র।