পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সহজ পাঠ \)8\© দিয়েছেন। অল্প কিছু দিন আগে খাজনা দিয়ে বৃন্দাবন জেলে তার কাছ থেকে এই পুকুরে মাছ ধরবার স্বত্ব পেয়েছে। উদ্ধব এ সংবাদ ঠিকমতো জানত না । তাই সেদিন রাত্রি থাকতে উঠে পদ্মপুকুর থেকে একটা বড়ো দেখে রুইমাছ ধ’রে বাড়ি আনবার উপক্রম করছে। এমন সময় বিঘ্ন ঘটল । সেদিন দুর্লভবাবুর ছোটো কন্যার অন্নপ্রাশন। খুব সমারোহ ক’রে লোক খাওয়ানো হবে । তারি মাছ সংগ্রহের জন্য বাবুর কর্মচারী কৃত্তিবাস কয়েক জন জেলে নিয়ে সেই পুষ্করিণীর ধারে এসে উপস্থিত। দেখে, উদ্ধব এক মস্ত রুই মাছ ধরেছে। সেটা তখনি তার কাছ থেকে কেড়ে নিলে । উদ্ধব কৃত্তিবাসের হাতে পায়ে ধ’রে র্কাদতে লাগল। কোনো ফল হোলো না। ধনঞ্জয় পেয়াদ তাকে বলপূর্বক ধ’রে নিয়ে গেল দুর্লভবাবুর কাছে। দুৰ্লভের বিশ্বাস ছিল, ম্যাজিস্টে টের কাছে অত্যাচারী বলে উদ্ধব তার দুনাম করেছে। তাই তার উপরে তার বিষম ক্রোধ। বললেন, “তুই মাছ চুরি করেছিস, তার দণ্ড দিতে হবে ।” ধনঞ্জয়কে বললেন, “এ’কে ধরে নিয়ে যাও । যতক্ষণ না দশ টাকা দণ্ড আদায় হবে, ছেড়ে দিয়ে না।" উদ্ধব হাতজোড় ক’রে বললে, “আমার দশ পয়সাও নেই । কাল কন্যার বিবাহ । কাজ শেষ হয়ে যাক, তারপরে আমাকে শাস্তি দেবেন।” দুর্লভবাবু তার কাতরবাক্যে কর্ণপাত করলেন না। ধনঞ্জয় উদ্ধবকে সকল লোকের সম্মুখে অপমান ক’রে ধীরে নিয়ে গেল । দুৰ্লভের পিসি কাত্যায়নী ঠাকরুন সেদিন অন্নপ্রাশনের নিমন্ত্রণে অন্তঃপুরে উপস্থিত ছিলেন । উদ্ধবের স্ত্রী মোক্ষদা তার কাছে এসে কেঁদে পড়ল । কাত্যায়নী দুর্লভকে ডেকে বললেন, “বাবা, নিষ্ঠুর হোয়ে না । উদ্ধবের কন্যার বিবাহে যদি অন্যায় করে৷ তবে তোমার কন্যার অন্নপ্রাশনে অকল্যাণ হবে । উদ্ধবকে মুক্তি দাও।” দুর্লভ পিসির অনুরোধ উপেক্ষা ক’রে চলে গেলেন । কৃত্তিবাসকে ডেকে কাত্যায়নী বললেন, “উদ্ধবের দণ্ডের এই দশ টাকা দিলাম। এখনি তাকে ছেড়ে দাও।” উদ্ধব ছাড়া পেলে । কিন্তু অপমানে লজ্জায় তার দুই চক্ষু দিয়ে জল পড়তে লাগল । পরদিন গোধূলি-লগ্নে নিস্তারিণীর বিবাহ। বেলা যখন চারটে, তখন পাচজন বাহক উদ্ধবের কুটির-প্রাঙ্গণে এসে উপস্থিত। কেউ বা এনেছে ঝুড়িতে মাছ, কেউ