পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(; o , , রবীন্দ্র-রচনাবলী জ্ঞানদাস কহে হাসি । “রাধে মোর” বোল বাজিবেক বঁাশী বঁাশীর স্বর। সৌন্দৰ্য্য-স্বরূপের হাতে সমস্ত জগতই একটি বঁাশী । ইহার রন্ধে রন্ধে তিনি নিশ্বাস পূরিতেছেন ও ইহার রন্ধে, রন্ধে, নূতন নূতন স্থর উঠিতেছে। মানুষের মন আর কি ঘরে থাকে ? তাই সে ব্যাকুল হইয়া বাহির হইতে চায় । সৌন্দৰ্য্যই তাহার আহবানগান। সৌন্দৰ্য্যই সেই দৈববাণী। কদম্ব ফুল তাহার বঁাশীর স্বর, বসন্ত ঋতু তাহার বঁাশীর স্বর, কোকিলের পঞ্চম তান তাহার বঁাশীর স্বর। সে বঁাশীর স্বর কি বলিতেছে ! জ্ঞানদাস হাসিয়া বুঝাইলেন, সে কেবল বলিতেছে “রাধে, তুমি আমার”—আর কিছুই না। আমরা শুনিতেছি, সেই অসীম সৌন্দৰ্য্য অব্যক্ত কণ্ঠে আমাদেরই নাম ধরিয়া ডাকিতেছেন। তিনি বলিতেছেন—“তুমি আমার, তুমি আমার কাছে আইস ।” /এই জন্য, আমাদের চারিদিকে যখন সৌন্দৰ্য্য বিকশিত হইয়া উঠে, তখন আমরা যেন একজন-কাহার বিরহে কাতর হই, যেন একজন-কাহার সহিত মিলনের জন্য উৎসুক হই–সংসারে আর যাহারই প্রতি মন দিই, মনের পিপাসা যেন দূর হয় না। এই জন্য সংসারে থাকিয়া আমরা যেন চির-বিরহে কাল কাটাই । কানে একটি বঁাশীর শব্দ আসিতেছে, মন উদাস হইয়া যাইতেছে, অথচ এ সংসারের অন্তঃপুর ছাড়িয়া বাহির হইতে পারি না । কে বঁাশী বাজাইয়া আমাদের মন হরণ করিল, তাহাকে দেখিতে পাই না ; সংসারের ঘরে ঘরে তাহাকে খুজিয়া বেড়াই। অন্য যাহারই সহিত মিলন হউক না কেন, সেই মিলনের মধ্যে একটি চিরস্থায়ী বিরহের ভাব প্রচ্ছন্ন থাকে। বিপরীত। আবার এক এক দিন বিপরীত দেখা যায়। জগৎ জগৎপতিকে বঁাশী বাজাইয়া ডাকে। র্তাহার বঁাশী লইয়া তাহাকে ডাকে । আজু কে গো মুরলী বাজায় ! এ ত কতু নহে শুামরায় ! ইহার গৌর বরণে করে আলো, চূড়াটি বাধিয়া কেবা দিল ।