পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কিন্তু লেখকের ক্ষমতার অভাবে বা বুদ্ধির দোষে অসম্পূর্ণ গ্রন্থগুলিকে কঠোর ভাবে সমালোচনা করিলে তাহাতে কি ভাল হয় বুঝিতে পারি না । সত্যের অংশ। সত্যকে আংশিক ভাবে দেখিলে অনেক সময়ে তাহা মিথ্যার রূপান্তর ধারণ করে । একপাশ হইতে একটা জিনিষকে দেখিয়া যাহা সহসা মনে হয়, তাহা একপেশে সত্য, তাহা বাস্তবিক সত্য না হইতেও পারে । আবার অপর পক্ষেও একটা বলিবার কথা আছে । কেহ সত্যকে সৰ্ব্বতোভাবে দেখিতে পায় না । সত্যকে যথাসম্ভব সৰ্ব্বতোভাবে দেখিতে গেলে প্রথমে তাহাকে আংশিক ভাবে দেখিতে হইবে, তাহা ব্যতীত আমাদের আর গতি নাই। ইহা আমাদের অসম্পূর্ণতার ফল। আমরা কিছু একেবারেই একটা চারি-কোণ দ্রব্যের সবটা দেখিতে পাই না—ঘুরাইয়া ঘুরাইয়৷ খণ্ড খণ্ড করিয়া দেখিতে হয়। এই নিমিত্ত উচিত এই যে, যে যে-দিকটা দেখিয়াছে সে সেই দিকটাই সম্পূর্ণরূপে বর্ণনা করুক, অবশেষে সকলের কথা গাথিয়া একটা সম্পূর্ণ সত্য পাওয়া যাইবে । আমাদের এক-চোখে মন লইয়া সম্পূর্ণ সত্য জানিবার আর কোন উপায় নাই। আমরা একদল অন্ধ, আর সত্য একটি হস্তী। স্পর্শ করিয়া করিয়া সকলেই হস্তীর এক একটি অংশের অধিক জানিতে পারি না ; এই জন্যই কিছু দিন ধরিয়া, হস্তীকে কেহ বা স্তম্ভ, কেহ বা সপ, কেহ বা কুলা বলিয়া ঘোরতর বিবাদ করিয়া থাকি, অবশেষে সকলের কথা মিলাইয়া বিবাদ মিটাইয়া লই । আমি যে ভূমিকাচ্ছলে এতটা পুরাতন কথা বলিলাম, তাহার কারণ এই—অামি জানাইতে চাই—একপেশে লেখার উপর আমার কিছু মাত্র বিরাগ নাই। এবং আমার মতে, যাহার একেবারে সত্যের চারিদিক দেখাইতে চায়, তাহারা কোন দিকই ভাল করিয়া দেখাইতে পারে না— তাহারা কতকগুলি কথা বলিয়া যায়, কিন্তু একটা ছবি দেখাইতে পারে না । একটা উদাহরণ দিলেই আমার কথা বেশ স্পষ্ট হইবে। একটা ছবি আঁকিতে হইলে, যথার্থত: যে দ্রব্য যেরূপ ঠিক সেরূপ অঁাকা উচিত নহে। যখন চিত্রকর নিকটের গাছ বড় করিয়া অঁাকে ও দূরের গাছ ছোট করিয়া অঁাকে, তখন তাহাতে এমন বুঝায় না যে বাস্তবিকই দূরের গাছগুলি আয়তনে ছোট। একজন যদি কোন ছবিতে সব গাছ প্রায় সম-আয়তনে অঁাকে, তবে তাহাতে সত্য বজায় থাকে বটে, কিন্তু সে ছবি