পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

이e - রবীন্দ্র-রচনাবলী ইহারা যখন পরম্পর টেপটিপি করিয়া বলিতে থাকেন “এই লোকটার মতলব বুঝিয়াছ ? কেবল আমাদের খোশামোদ করা” বা "অমুকের নিন্দ করা” বা “সাধারণের কাছে নাম পাইবার প্রয়াস”—তখন সংলোকের জীবনের মূলে গিয়া কুঠারাঘাত পড়ে, তাহার সমস্ত জীবনের আশা ম্রিয়মান হইয়া যায়। সকল কাজ, সকল বিষয় হইতেই একটা গৃঢ় মতলব বাহির করিবার চেষ্টা অনেক কারণে হইয়া থাকে। প্রথমতঃ, কেহ কেহ এমন আত্মাভিমানী আছে যে, নিজেকেই সমস্ত কথা, সমস্ত কাজের লক্ষ্য মনে করে। সমস্ত জগৎ যেন তাহার দিকেই আঙুল বাড়াইয়া আছে । সে যে-কথা শুনে, আত্মম্ভরিতার ব্যাকরণ ও অভিধানের সহিত মিলাইয় তাহার একটা গুঢ় অর্থ ব্যাখ্যা করিতে থাকে। সে যে-কাজ দেখে, আত্মাভিমানের চাবি দিয়া সেই কাজের গৃঢ় কবাট উদঘাটন করিয়া তাহার মধ্যে নিজের প্রতিমা দেখিতে পায় । সে মনে করে বিশ্বচরাচর খাওয়াদাওয়া বন্ধ করিয়া তাহার অনিষ্ট বা তাহাকে সন্তুষ্ট করিবার জন্যই দিন রাত্রি একটা পরামর্শ করিতেছে ! সে পথপাশ্বস্থিত সাপের মত সৰ্ব্বদাই মনে করে, পান্থগণ তাহারই লেজ মাড়াইবার জন্য পাকচক্র করিতেছে, এই জন্য সে ভীত হইয়া আগে হইতেই ছোবল মারে । এই সকল কীটগণ মনে করে ফুলেরা যে সুন্দর হইয়া ফুটিয়া উঠে সে কেবল ইহাদের দংশনমুখ অনুভব করিবার জন্যই ! এই সকল পেচকেরা মনে করে যে, সুর্য্য যে কিরণ দান করেন, সে কেবল পেচার সহিত র্তাহার শক্রতা আছে বলিয়াই । আর এক* দল লোক আছেন, তাহারা চিরকাল মতলব খাটাইয়া আসিতেছেন, তাহারা সহজে বিশ্বাস করিতে পারেন না পৃথিবীতে কাহারো উদারতা আছে। সিধ কথা, সামান্ত কাজের মধ্য হইতে একটা ঘোরতর গৃঢ় মতলব বাহির করিতে ইহাদের বুদ্ধি অত্যন্ত আমোদ পায়। একটা দুরন্ত অস্থির ছুচাল বক্রবুদ্ধি ইহাদের মনের মধ্যে দিন-রাত ছট্‌ফট্‌ করিতেছে, তাহাকে ত একটা কাজ দিতে হইবে—সিধা কাজে সে খেলাইতে পায় না—এই নিমিত্ত সিধার মধ্যেও সে একটা বঁকা রাস্ত গড়িয়া লয় । খেলাইবার জায়গা ভাল ! এক জন লোকের জীবনের একমাত্র উদ্দেশু, একমাত্র আশা, যাহার কাছে সে তাহার দুৰ্দ্দাস্ত স্বার্থপরতাকে বলিদান দিয়াছে, মান অপমানকে তৃণ জ্ঞান করিয়াছে তাহাই লইয়া খেলা ! এক জন লোক যখন পরের দুঃখ দেখিয়া, দারিদ্র্য দেখিয়া কাদিয়া উঠিয়াছে, তখন তাহার সেই অশ্রুবিন্দু লইয়া সমালোচনা ! এক জন সহৃদয় লোক যখন উচ্ছ্বসিত আবেগে প্রাণের কথা বলিতেছে, তখন তাহার সেই কথাগুলিকে বাক ছাচে ঢালিয়া তাহাদের আকৃতি সম্পূর্ণ বদল করিয়া দেওয়া ! এ সকল কেমনতর হৃদয়হীন খেলা ! ইহাতে যে তোমার নিজের হৃদয়ের সর্বনাশ করা