পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१8 - রবীন্দ্র-রচনাবলী কাব্যের বাস্থ আকার মাত্র, তাহাই লইয়া কাব্যের শ্রেণী নির্দেশ করিতে যাওয়া দূরদর্শীর লক্ষণ নহে। যে অনিবাৰ্য্য নিয়মে সেই মিলন বা মরণ সংঘটিত হইল, তাহারি প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে হইবে। মহাভারতের অপেক্ষ মহান ট্র্যাজেডি কে কোথায় দেখিয়াছ ? স্বৰ্গারোহণকালে দ্ৰৌপদী ও ভীমাৰ্জুন প্রভৃতির মৃত্যু হইয়াছিল বলিয়াই যে মহাভারত ট্র্যাজেডি তাহা নহে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভীষ্ম কৰ্ণ দ্রোণ এবং শত সহস্র রাজা ও সৈন্ত মরিয়াছিল বলিয়াই যে মহাভারত ট্র্যাজেডি তাহা নহে– কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যখন পাগুবদিগের জয় হইল, তখনই মহাভারতের যথার্থ ট্র্যাজেডি আরম্ভ হইল। তাহারা দেখিলেন জয়ের মধ্যেই পরাজয় । এত দুঃখ, এত যুদ্ধ, এত রক্তপাতের পর দেখিলেন, হাতে পাইয়া কোন সুখ নাই, পাইবার জন্য উদ্যমেই সমস্ত মুখ ; যতটা করিয়াছেন, তাহার তুলনায় যাহা পাইলেন, তাহা অতি সামান্য ; এত দিন যুঝাযুঝি করিয়া হৃদয়ের মধ্যে একটা বেগবান অনিবার উদ্যমের স্বষ্টি হইয়াছে, যথনি ফল লাভ হইল, তখনি সে উদ্যমের কার্য্যক্ষেত্র মরুময় হইয়া গেল, হৃদয়ের মধ্যে সেই দুর্ভিক্ষ-পীড়িত উদ্যমের হাহাকার উঠিতে লাগিল ; কয়েক হস্ত জমি মিলিল বটে, কিন্তু হৃদয়ের দাড়াইবার স্থান তাহার পদতল হইতে ধসিয়া গেল, বিশাল জগতে এমন স্থান সে দেখিতে পাইল না যেখানে সে তাহার উপার্জিত উদ্যম নিক্ষেপ করিয়া সুস্থ হইতে পারে ; ইহাকেই বলে ট্র্যাজেডি। আরো নাবিয়া আসা যাক, ঘরের কাছে একটা উদাহরণ মিলিবে । স্বৰ্য্যমুখীর সহিত নগেন্দ্রের শেষকালে মিলন হইয়া গেল বলিয়াই কি বিষবৃক্ষ ট্র্যাজেডি নহে ? সেই মিলনের মধ্যেই কি চিরকালের জন্য একটা অভিশাপ জড়িত হইয়া গেল না ? যখন মিলনের মুখে হাসি নাই, যখন মিলনের বুক ফাটিয়া যাইতেছে, যখন উৎসবের কোলের উপরে শোকের কঙ্কাল, তখন তাহার অপেক্ষ আর ট্র্যাজেডি কি আছে ? কুন্দনন্দিনীর সমস্ত শেষ হইয় গেল বলিয়| বিষবৃক্ষ ট্র্যাজেডি নহে–কুন্দনন্দিনী ত এ ট্র্যাজেডির উপলক্ষ্য মাত্র । নগেন্দ্র ও স্বৰ্য্যমুখীর মিলনের বুকের মধ্যে কুন্দনন্দিনীর মৃত্যু চিরকাল বাচিয়া রহিল—মিলনের সহিত বিয়োগের চিরস্থায়ী বিবাহ হইল ; —আমরা বিষবৃক্ষের শেষে এই নিদারুণ অশুভ-বিবাহের প্রথম বাসরের রাত্রি মাত্র দেখিতে পাইলাম—বাকীটুকু কেবল চোখ বুজিয়া ভাবিলাম—ইহাই ট্র্যাজেডি ! অনেকে জানেন না, সমস্তটা নিকাশ করিয়া ফেলিলে অনেক সময় ট্র্যাজেডির ব্যাঘাত হয় । অনেক সময়ে সেমিকোলনে যতটা ট্র্যাজেডি থাকে, দাড়িতে ততটা থাকে না। কিন্তু র্যাহারা না বুঝিয়া ট্র্যাজেডি লিখিতে যান, তাহার কাব্যের আরম্ভ হইতেই বিষ ফরমাস দেন, ছুরি শানাইতে থাকেন, ও চিতা সাজাইতে স্বরু করেন। এপিক্ব (Epic) শব্দটা লইয়াও এইরূপ গোলযোগ হইয়া থাকে। এপিক বলিতে