পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) প্রথম খণ্ড.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী لما لا পরিণতি নানা বাক নিয়েছে ও রূপ নিয়েছে ; একটা কোনো ঐক্যের স্বাক্ষর তাদের সকলের মধ্যে অঙ্কিত হয়ে নিশ্চয়ই পরস্পরের আত্মীয়তার প্রমাণ দিতে থাকে। র্যারা বাইরে থেকে সন্ধান ও চর্চা করেন তাদের বিচারবুদ্ধির কাছে সেটা ধরা পড়ে। কিন্তু লেখকের কাছে সেটা স্পষ্ট গোচর হয় না । মনের ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে যখন ফুল ফোটায় ফল ফলায় তখন সেইটের আবেগ ও বাস্তবতাই কবির কাছে হয় একান্ত প্রত্যক্ষ । তার মাঝে মাঝে সময় আসে যখন ফলন যায় কমে, যখন হাওয়ার মধ্যে প্রাণশক্তির প্রেরণা হয় ক্ষীণ । তখন ইতস্তত যে ফসলের চিহ্ন দেখা দেয় সে আগেকার কাটা শস্তের পোড়ো বীজের অঙ্কুর । এই অফলা সময়গুলো ভোলবার যোগ্য । এটা হল উদ্ধৃবৃত্তির ক্ষেত্র তাদেরই কাছে র্যারা ঐতিহাসিক সংগ্রহকর্তা । কিন্তু ইতিহাসের সম্বল আর কাব্যের সম্পত্তি এক জাতের নয় । ইতিহাস সবই মনে রাখতে চায় কিন্তু সাহিত্য অনেক ভোলে । ছাপাখানা ঐতিহাসিকের সহায় । সাহিত্যের মধ্যে আছে বাছাই করার ধর্ম, ছাপাখানা তার প্রবল বাধা । কবির রচনাক্ষেত্রকে তুলনা করা যেতে পারে নীহারিকার সঙ্গে । তার বিস্তীর্ণ ঝাপসা আলোর মাঝে মাঝে ফুটে উঠেছে সংহত ও সমাপ্ত স্থষ্টি । সেইগুলিই কাব্য। আমার রচনায় আমি তাদেরই স্বীকার করতে চাই । বাকি যত ক্ষীণ বাষ্পীয় ফাকগুলি যথার্থ সাহিত্যের শামিল নয়। ঐতিহাসিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী ; বাষ্প, নক্ষত্র, ফাক, কোনোটাকেই সে বাদ দিতে চায় না । 'আমার আয়ু এখন পরিণামের দিকে এসেছে । আমার মতে আমার শেষ কর্তব্য হচ্ছে, যে লেখাগুলিকে মনে করি সাহিত্যের লক্ষ্যে এসে পৌচেছে তাদের রক্ষা করে বাকিগুলোকে বর্জন করা । কেননা, রসসৃষ্টির সত্য পরিচয়ের সেই একমাত্র উপায় । সব কিছুকে নিবিচারে রাণীকৃত করলে সমগ্রকে চেনা যায় না । সাহিত্যরচয়িতারূপে আমার চিত্তের যেএকটি চেহারা আছে সেইটেকে স্পষ্ট করে প্রকাশ করা যেতে পারলেই আমার সার্থকতা। অরণ্যকে চেনাতে গেলেই জঙ্গলকে সাফ করা চাই, কুঠারের দরকার ।