পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) প্রথম খণ্ড.pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্রসঙ্গ \ల69 একটি গোলাব ফুল তুলিয়াছ, তোমার হাতে সেটি রহিয়াছে, আমি দূর হইতে দেখিতেছি। তুমি ইচ্ছা করিলে সে গোলাপটি ছিড়িয়া কুটিকুটি করিতে পার, সে ক্ষমতা তোমার আছে, কিন্তু সে গোলাপটির সৌন্দৰ্য্য উপভোগ করিবার ক্ষমতা তোমার নাই— ইচ্ছা করিলে আর সব করিতে পার, কিন্তু মাথা খুড়িয়া মরিলেও তাহাকে উপভোগ করিতে পার না— আর, আমি তাহাকে ছিড়িতে পারি না বটে, কিন্তু দূর হইতে দেখিয় তাহার সৌন্দৰ্য্য উপভোগ করিতে পারি। তাহার গোলাব ছিড়িবার ক্ষমতা আছে, আমার গোলাপ উপভোগ করিবার ক্ষমতা আছে, কোন ক্ষমতাটি গুরুতর ? তবে কেন সে তাহাকে “আমার গোলাপ” বলে, আর আমি পারি না ? তবে, গোলাপ সম্বন্ধে যেটি সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ক্ষমতা আমার তাহা আছে, তৰু সে গোলাবের অধিকারী আমি নহি । এ স্থলে দেখা যাইতেছে, ষে বলদ চিনি বহন করিয়া থাকে প্রচলিত ভাষায় তাহাকেই চিনির অধিকারী কহে । আর যে মাকুৰ ইচ্ছা করিলেই সে চিনি খাইতে পারে সে মানুষের সে চিনিতে অধিকার নাই । তুমি হয়ত বলিবে, যাহার উপর আমাদের শারীরিক ক্ষমতা খাটে, চলিত ভাষায় তাহাকেই “আমার” কহে । তাহাও ঠিক নহে, বাহার সহিত আমার হৃদয়ে হৃদয়ে যোগ আছে তাহাকেও ত অামি “আমার” কহি । তুমি। আচ্ছ, আমি হার মানিলাম। কিন্তু তুমি কি সিদ্ধান্ত করিলে শুনি। আমি । যে কোন পদার্থ আমরা দেখি, শুনি, ইঞ্জিয় বা হৃদয় দিয়া উপলদ্ধি করি, তাহাই আমাদের । তুমি ষে ফুলকে “আমার” বল তুমি তাহাকে দেখিতে পার, স্পর্শ করিতে পার, ভ্রাণ করিতে পাও ; আমি আর কিছু পাই না, কিন্তু যদি তাহাকে দেখিতে পাই, তবে সে মুহূৰ্ত্তেই তাহার সহিত আমার সম্বন্ধ বাধিয়া গেল, সে সম্বন্ধ হইতে কেহ আমাকে আর বঞ্চিত করিতে পারিবে না ! তুমিও তাহার সব পাও নি, আমিও তাহার সব পাই নি, কারণ মানুষের পক্ষে তাহ অসম্ভব ; তুমিও তাহার কিছু পাইলে, আমিও তাহার কিছু পাইলাম, অতএব তোমারও সে, আমারও লে। এই জন্তই জনক কহিয়াছিলেন, “কোন পদার্থেই আমার অধিকার নাই, অথবা সমুদয় পদার্থেরই অধিকারী অামি । ফলতঃ ইহলোকে সকল বস্তুতেই সকলের সমান অধিকার রহিয়াছে।” সন্ধ্যা বা উষাকে কেহ “আমার সন্ধ্য৷” “আমার উষা” বলে না কেন ? যদি বল তাহার কারণ তাহারা সকল মানুষের পক্ষেই সমান, তাহ হইলে ভুল বলা হয়। আমি সন্ধ্যাকে তোমাদের সকলের চেয়ে অধিক উপভোগ করি, অতএব সেই উপভোগ-ক্ষমতার বলে তোমাদের কাছ হইতে সন্ধ্যার দখলি-স্বত্ব কাড়িয়া লইয়া সন্ধ্যাকে বিশেষ করিয়া “আমার সন্ধ্যা” বলি না কেন ? তাহার কারণ