পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) প্রথম খণ্ড.pdf/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WONG e রবীন্দ্র-রচনাবলী না। অনেক সময়ে জামরা নেশাকে ভালবাসা বলি। রাম ও শুাম উভয়ে উভয়ের কাছে হয়ত “মেীতাতের” স্বরূপ হইয়াছে, রাম ও শুাম উভয়কে উভয়ের অভ্যাস হইয়া গিয়াছে, রামকে নহিলে শুামের বা শুামকে নহিলে রামের অভ্যাস-ব্যাঘাতের দরুন কষ্ট বোধ হয়। ইহাকেও ভালবাসা বলে না। প্রণয়ের পাত্র নীচই হউক, নিষ্ঠুরই হউক, আর কুচরিত্রই হউক, তাহাকে জাকড়িয়া ধরিয়া থাকাকে অনেকে প্রণয়ের পরাকাষ্ঠী মনে করিয়া থাকে। কিন্তু, ইহা বিবেচনা করা উচিত, নিতান্ত অপদাৰ্থ দুৰ্ব্বলহৃদয় নহিলে কেহ নীচের কাছে নীচু হইতে পারে না। এমন অনেক ক্রীতদাসের কথা শুনা গিয়াছে যাহারা নিষ্ঠুর নীচাশয় প্রভুর প্রতিও অন্ধভাবে আসক্ত, কুকুরেরাও সেইরূপ। এরূপ কুকুরের মত, ক্রীতদাসের মত ভালবাসাকে ভালবাসা বলিতে কোন মতেই মন উঠে না। প্রকৃত ভালবাসা দাস নহে, সে ভক্ত ; সে ভিক্ষুক নহে, সে ক্রেতা । আদর্শ প্রণয়ী প্রকৃত সৌন্দৰ্য্যকে ভালবাসেন, মহত্ত্বকে ভালবাসেন ; তাহার হৃদয়ের মধ্যে ষে আদর্শ ভাব জাগিতেছে তাহারই প্রতিমাকে ভালবাসেন । প্রণয়ের পাত্র যেমনই হউক, অন্ধভাবে তাহার চরণ আশ্রয় করিয়া থাকা তাহার কৰ্ম্ম নহে। তাহাকে ত ভালবাসা বলে না, তাহাকে কর্দমবৃত্তি বলে। কর্দম একবার পা জড়াইলে আর ছাড়িতে চায় না, তা সে যাহারই পা হউক না কেন, দেবতারই হউক আর নরাধমেরই হউক! একৃত ভালবাসা যোগ্যপাত্ৰ দেখিলেই আপনাকে তাহার চরণগুলি করিয়া ফেলে। এই নিমিত্ত ধূলিবৃত্তি করাকেই অনেকে ভালবাস৷ বলিয়া ভুল করেন। তাহারা জানেন না যে, দাসের সহিত ভক্তের বাহ আচরণে অনেক সাদৃপ্ত আছে বটে, কিন্তু একটি প্রধান প্রভেদ আছে— ভক্তের দাসত্বে স্বাধীনতা আছে, ভক্তের স্বাধীন দাসত্ব। তেমনি প্রকৃত প্রণয় স্বাধীন প্রণয় । সে দাসত্ব করে, কেননা দাসত্ববিশেষের মহত্ব সে বুঝিয়াছে। যেখানে দাসত্ব করিয়া গৌরব আছে, সেইখানেই সে দাস, যেখানে হীনতা স্বীকার করাই মৰ্য্যাদা, সেইখানেই সে হীন । ভালবাসিবার জন্যই ভালবাসা নহে, ভাল ভালবাসিবার জন্তই ভালবাসা । তা যদি না হয়, যদি ভালবাসা হীনের কাছে হীন হইতে শিক্ষা দেয়, যদি অসৌন্দর্ঘ্যের কাছে রুচিকে বদ্ধ করিয়া রাখে, তবে ভালবাসা নিপাত স্বাক ।