পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) প্রথম খণ্ড.pdf/৩৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

శ్రీN98 রবীন্দ্র-রচনাবলী বধিরতার সুখ অদ্বিতীয় রমণী ও অসাধারণ পুরুষ জর্জ এলিয়ট তাহার একটি উপন্যাসে লিখিয়াছেন যে, আমরা জীবনে অনেক ছোট ছোট দুঃখঘটনা দেখিতে পাই, কিন্তু তাহা এত সাধারণ ও সামান্যকারণজাত যে, তাহাতে আর আমাদের করুণা উদ্রেক করিতে পারে না, তাহা যদি পারিত তবে জীবন কি কষ্টেরই হইত। যদি আমরা কাঠবিড়ালীর হৃদয়স্পন্দন শুনিতে পাইতাম, যখন একটি ঘাস মৃত্তিক ভেদ করিয়া গজাইতেছে তখন তাহার শব্দটুকুও শুনিতে পাইতাম, তবে আমাদের কানের পক্ষে কি দুর্দশাই হইত ! আমরা যেমন দিগন্ত পর্য্যস্ত সমূদ্র প্রসারিত দেখিতে পাই, কিন্তু সমুদ্রের সীমা সেইখানেই নয়, তাহা অতিক্রম করিয়াও সমুদ্র আছে— তেমনি আমরা যাহাকে স্তব্ধতার দিগন্ত বলি তাহার পরপারেও শব্দের সমুদ্র আছে, তাহা অামাদের শ্রবণের অতীত। পিপীলিকা যখন চলে তখন তাহারে পদশব্দ হয়, ফুল হইতে শিশির যখন পড়ে তখন সেও নীরব অশ্রজল নহে সেও বিলাপ করিয়া ঝরিয়া পড়ে । জর্জ এলিয়ট অন্তের সম্বন্ধে যাহা বলিয়াছেন আমরা নিজের সম্বন্ধেও তাহাই প্রয়োগ করিয়া দেখিব । মনে কর, আমাদের নিজের হৃদয়ের মধ্যে যাহা চলে তাহ সমস্তই আমরা যদি দেখিতে পাইতাম, শুনিতে পাইতাম, তাহা হইলে আমাদের কি দুর্দশাই হইত! জর্জ এলিয়ট দৃষ্টাস্তস্বরূপে কাঠবিড়ালীর হৃদয়স্পন্দন ও তৃণউম্ভেদের শব্দ উল্লেখ করিয়াছেন, কিন্তু আমরা ঘদি নিজের দেহের ক্ষীণতম হৃদয়স্পন্দন, নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস-পতন, রক্তচলাচলের শব্দ, নখ ও কেশ -বৃদ্ধি, এবং বয়োবৃদ্ধি সহকারে দেহায়তনবৃদ্ধির শব্দটুকুও অনবরত শুনিতে পাইতাম, তবে আমাদের কি দশাই হইত। যখন আমরা প্রাণ খুলিয়া হাসিতেছি তখনো জামাদের হৃদয়ের মৰ্ম্মস্থলে অতিপ্রচ্ছন্নভাবে বলিয়া যে একটি বিষাদ, একটি অভাব নিঃশ্বাস ফেলিতেছে, তাহা যদি শুনিতে পাইতাম তবে কি আর হাসি বাহির হইত ? যখন আমরা দান করিতেছি ও সেই সঙ্গে "নিঃস্বার্থ পরোপকার করিতেছি” মনে করিয়া মনে মনে অতুল আনন্দ উপভোগ করিতেছি, তখন যদি আমরা আমাদের সেই পরোপচিকীর্ধার অতি প্রচ্ছন্ন অস্তর্দেশে যশোলিন্স বা অার একটা কোন ক্ষুত্র স্বার্থপরতার বক্রমূৰ্ত্তি দেখিতে পাই, তবে কি আর আমরা সেরূপ বিমলানন্দ উপভোগ করিতে পারি ? আবার আর এক দিকে দেখ। যেমন, এমন শব্দ আছে বাহ