পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) প্রথম খণ্ড.pdf/৪০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিবিধ প্রসঙ্গ 2) שסא অসংখ্য জগৎ উপরের কথাটাকে আরো একটু বিস্তৃত করা যাক। একজন লোক মরিয়া গেল, আমরা সাধারণতঃ মনে করি সেই গেল, তাহার সহিত আর কিছু গেল না। এরূপ ভ্ৰমে পড়িবার প্রধান কারণ এই যে, আমরা সচরাচর মনে করি ষে, সেও যে জগতে আছে আমরাও সেই জগতে আছি, সেও যাহা দেখিতেছে জামরাও তাহাই দেখিতেছি। কিন্তু সেই অঞ্জুমানটাই ভ্ৰম নাকি, এই নিমিত্ত সমস্ত যুক্তিতে ভ্রম পৌছিয়াছে। সে যাহা দেখিতেছে আমরা তাহ দেখিতেছি না, সে যেখানে আছে আমরা সেখানে নাই। সে দেখিতেছে, ভাগীরথী পতিমিলনাশয়ে চঞ্চল যুবতীর স্তায় নৃত্য করিতেছে, গান গাইতেছে ; আমি দেখিতেছি ভাগীরথী স্নেহময়ী মাতার স্থায় তটভূমিকে স্তনপান করাইতেছেন, তরঙ্গহন্তে অনবরত তাহার ললাটে অভিঘাত করিয়া কলকণ্ঠে বৈচিত্র্যহীন ঘুম পাড়াইবার গান গাহিতেছেন। উভয় জগতের উভয় জাহ্নবীর মধ্যে এত প্রভেদ । ঐই প্রকায়, যত লোক আছে সকল লোকেরই জগৎ স্বতন্ত্র। লোক অর্থে, মহন্তবিশেষ এবং লোক অর্থে জগৎ বুঝায়। অর্থাৎ একজন মন্থন্তু বলিলে একটি জগৎ বলা হয় । আমি কে ? না, আমি যাহা কিছু দেখিতেছি— চন্দ্র স্থধ্য পৃথিবী ইত্যাদি— সমস্ত লইয়। একজন । তুমিও তাহাই । অতএব প্রতি লোকের সঙ্গে সঙ্গে শত শত চন্দ্র স্থৰ্য্য জন্মগ্রহণ করে ও শত শত চন্দ্র স্থৰ্য্য মরিয়া যায়। অতএব দেখ, জগৎ যেমন অসংখ্য তেমনি বিচিত্র। কাহারো জগতে স্থৰ্য্যোদয় অাছে, আঁধারের অপগমন ও আলোকের আগমন আছে, কিন্তু শ্ৰ ভাত নাই। সে ব্যক্তি স্থৰ্য্যোদয়-রূপ একট। ঘটনা দেখিতে পায় বটে, কিন্তু প্রভাত দেখিতে পায় না। প্রভাতশিশির, প্রভাতসমীরণ, প্রভাতমেঘমালা, প্রভাত-অৰুণরাগের সামঞ্জস্ত দেখিতে পায় না ; সুতরাং তাহার জগতে প্রভাত ব্যতীত প্রভাতের জার সমস্তই আছে। কাহারে বা প্রভাত আছে, সন্ধ্যা নাই । বসন্ত আছে, শরৎ নাই । কাহারে জ্যোৎস্না হাসে, কাহারো জ্যোৎস্না কাদে । কাহারো জগতে টাকার ঝমকম্ ব্যতীত সঙ্গীত নাই, মলের ঝমৃঝম্ ব্যতীত কবিতা নাই, উদরের বাহিরে মুখ নাই, ইঞ্জিয়ের বাহিরে অস্তিত্ব নাই। এমন কত কহিব ! এ সকল ত স্পষ্ট প্রভেদ ; স্বল্প প্রভেদ কত আছে, তাহার মাম কে করিবে ?