পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

•8ર রবীন্দ্র-রচনাবলী ↔ দিয়ে সেই মুখ যেন তিলে তিলে তৈরি। সে কী চোখ, কী নাক। তরুণ গোফের রেখা ভ্রমরের ছুটি ডানার মতো—যেমন কালো, তেমনি কোমল । স্বামীকে দেখলুম তার সঙ্গে ঠিক মেলে না। এমন কি তার রঙ দেখলুম আমারই মতো। নিজের রূপের অভাব নিয়ে মনে যে সংকোচ ছিল সেটা কিছু ঘুচল বটে কিন্তু সেই সঙ্গে একটা দীর্ঘনিশ্বাসও পড়ল। নিজের জন্যে লজ্জায় না হয় মরেই যেতুম, তবু মনে মনে যে-রাজপুত্রটি ছিল তাকে একবার চোখে চোখে দেখতে পেলুম না কেন ? কিন্তু রূপ যখন চোখের পাহারা এড়িয়ে লুকিয়ে অস্তরে দেখা দেয় সেই বুঝি ভালো । তখন সে যে ভক্তির অমরাবতীতে এসে দাড়ায়—সেখানে তাকে কোনো সাজ করে আসতে হয় না । ভক্তির আপন সৌন্দর্যে সমস্তই কেমন স্বন্দর হয়ে ওঠে সে আমি ছেলেবেলায় দেখেছি। মা যখন বাবার জন্যে বিশেষ করে ফলের খোসা ছাড়িয়ে সাদা পাথরের রেকাবিতে জলখাবার গুছিয়ে দিতেন, বাবার জন্যে পানগুলি বিশেষ করে কেওড়া-জলের ছিটে-দেওয়া কাপড়ের টুকরোয় আলাদা জড়িয়ে রাখতেম, তিনি খেতে বসলে তালপাতার পাখা নিয়ে আস্তে আস্তে মাছি তাড়িয়ে দিতেন, র্তার সেই লক্ষ্মীর হাতের আদর, তার হৃদয়ের সেই স্থপারসের ধারা কোন অপরূপ রূপের সমুদ্রে গিয়ে কাপ দিয়ে পড়ত সে যে আমার সেই ছেলেবেলাতেও মনের মধ্যে বুঝতুম | সেই ভক্তির সুরটি কি আমার মনের মধ্যে ছিল না ? ছিল। তর্ক না, ভালোমন্দের তত্ত্বনির্ণয় না, সে কেবলমাত্র একটি সুর । সমস্ত জীবনকে যদি জীবন- । বিধাতার মন্দির-প্রাঙ্গণে একটি স্তবগান করে বাজিয়ে যাবার কোনো সার্থকতা থাকে, তবে সেই প্রভাতের স্বরটি আপনার কাজ আরম্ভ করেছিল । মনে আছে, ভোরের বেলায় উঠে অতি সাবধানে যখন স্বামীর পায়ের ধুলো নিতুম তখন মনে হত আমার সি থের সি দুরটি যেন শুকতারার মতো জলে উঠল। একদিন তিনি হঠাৎ জেগে হেসে উঠে বললেন, ও কী বিমল, করছ কী ? আমার সে-লজ্জা ভুলতে পারব না। তিনি হয়তো ভাবলেন, আমি লুকিয়ে পুণ্য অর্জন করছি। কিন্তু নয়, নয়, সে আমার পুণ্য নয়,—সে আমার নারীর হৃদয়, তার ভালোবাসা আপনিই পূজা করতে চায়। আমার শ্বশুর-পরিবার সাবেক নিয়মে বাধা । তার কতক কায়দা-কানুন মোগলপাঠানের, কতক বিধিবিধান মন্থপরাশরের । কিন্তু আমার স্বামী একেবারে একেলে । এ-বংশে তিনিই প্রথম রীতিমত লেখাপড়া শেখেন, আর এম. এ. পাশ করেন। তার