পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ç ঘরে-বাইরে S86 বড়ো দুই ভাই মদ খেয়ে অল্পবয়সে মারা গেছেন—তাদের ছেলেপুলে নেই । আমার স্বামী মদ খান না, তার চরিত্রে কোনো চঞ্চলতা নেই—এ-বংশে এট। এত খাপছাড়া যে, সকলে এতটা পছন্দ করে না, মনে করে যাদের ঘরে লক্ষ্মী নেই অত্যস্ত নির্মল হওয়া তাদেরই সাজে ; কলঙ্কের প্রশস্ত জায়গা তারার মধ্যে নেই, চাদের মধ্যেই আছে । বহুকাল হল আমার শ্বশুর-শাশুড়ীর মৃত্যু হয়েছে। আমার দিদিশাশুড়ীই ঘরের কত্রী। আমার স্বামী তার বক্ষের হার, তার চক্ষের মণি । এই জন্তেই আমার স্বামী কায়দার গণ্ডি ডিঙিয়ে চলতে সাহস করতেন । এই জন্তেই তিনি যখন মিস গিলবিকে আমার সঙ্গিনী আর শিক্ষক নিযুক্ত করলেন তখন ঘরে বাইরে যত রসনা ছিল তার সমস্ত রস বিব হয়ে উঠল, তবু আমার স্বামীর জেদ বজায় রইল। " সেই সময়েই তিনি বি. এ. পাশ করে এম. এ. পড়ছিলেন । কলেজে পড়বার জন্তে তাকে কলকাতায় থাকতে হত। তিনি প্রায় রোজই আমাকে একটি করে চিঠি লিখতেন, তার কথা অল্প, তার ভাষা সাদা, তার হাতের সেই গোটা গোটা গোল গোল অক্ষরগুলি যেন স্নিগ্ধ হয়ে আমার মুখের দিকে চেয়ে থাকত। একটি চলনকাঠের বাক্সের মধ্যে আমি তার চিঠিগুলি রাখতুম, আর রোজ বাগান থেকে ফুল তুলে সেগুলি ঢেকে দিতুম । তখন আমার সেই রূপকথার রাজপুত্ৰ অরুণালোকে চাদের মতো মিলিয়ে গেছে। সেদিন আমার সত্যকার রাজপুত্র বসেছে আমার হৃদয়-সিংহাসনে । আমি তার রানী, তfর পাশে আমি বসতে পেরেছি ; কিন্তু তার চেয়ে আনন্দ—র্তার পায়ের কাছে আমার যথার্থ স্থান । আমি লেখাপড়া করেছি সুতরাং এখনকার কালের সঙ্গে আমার এখনকার ভাষাতেই পরিচয় হয়ে গেছে। আমার আজকের এই কথাগুলো আমার নিজের কাছেই কৰিত্বের মতো শোনাচ্ছে । এ কালের সঙ্গে যদি আমার মোকাবিলা না হত তা হলে আমার সেদিনকার সেই ভাবটাকে সোজা গদ্য বলেই জানতুম—মনে জানতুম মেয়ে হয়ে জন্মেছি এ যেমন আমার ঘরগড়া কথা নয় তেমনি মেয়েমানুষ প্রেমকে ভক্তিতে গলিয়ে দেৰে এও তেমনি সহজ কথা—এর মধ্যে বিশেষ কোনো একটা অপরূপ কাব্য-সৌন্দর্য আছে কিনা সেটা এক মুহূর্তের জন্তে ভাববার দরকার নেই। \ কিন্তু সেই কিশোর বয়স থেকে আজ এই যৌবনের মাঝামাঝি পর্যন্ত পৌছতে নাপৌছতে আর-এক যুগে এসে পড়েছি। যেটা নিশ্বাসের মতো সহজ ছিল এখন সেটাকে কাৰ্যকলার মতো করে গড়ে তোলবার উপদেশ আসছে। এখনকার ভাবুক