পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

У & о রবীন্দ্র-রচনাবলী মরে তো মরুক না, সে জন্ত আমি ভাবছি নে—আমি আমার জন্তে ভাবছি। সত্যি নাকি, তোমার আবার ভাবনা কিসের ? আমার স্বামী হাসিমুখে চুপ করে রইলেন। আমি তার ধরণ জানি, তাই বললুম, না, অমন চুপ করে ফাকি দিয়ে গেলে চলবে না, এ-কথাটা তোমার শেষ করে যেতে হবে । তিনি বললেন, কথা কি মুখের কথাতেই শেষ হয় ? সমস্ত জীবনে কত কথা শেষ হয় না । না, তুমি হেঁয়ালি রাখে, বলে । আমি চাই, বাইরের মধ্যে তুমি আমাকে পাও আমি তোমাকে পাই। ওইখানে আমাদের দেনাপাওনা বাকি আছে । কেন, ঘরের মধ্যে পাওয়ার কমতি হল কোথায় ? এখানে আমাকে দিয়ে তোমার চোখে-কান-মুখ সমস্ত মুড়ে রাপা হয়েছে—তুমি যে কাকে চাও তাও জান না, কাকে পেয়েছ তাও জান না । খুব জানি গো খুব জানি । মনে করছ জানি, কিন্তু জান কি না তা ও জান না । দেখো তোমার এই কথাগুলো সইতে পারি নে। সেই জন্যেই তো বলতে চাই নি । তোমার চুপ করে থাকা আরও সইতে পারি নে । তাই তো আমার ইচ্ছে, আমি কথাও কইব না চুপও করব না, তুমি একবার বিশ্বের মাঝখানে এসে সমস্ত আপনি বুঝে নাও । এই ঘরগড়া ফাকির মধ্যে কেবলমাত্র ঘরকরনাটুকু করে যাওয়ার জন্তে তুমিও হও নি আমিও হই নি । সত্যের মধ্যে আমাদের পরিচয় যদি পাকা হয় তবেই আমাদের ভালোবাসা সার্থক হবে। পরিচয় তোমার হয়তো বাকি থাকতে পারে কিন্তু আমার কিছুই বাকি নেই । বেশ তো, আমারই যদি বাকি থাকে সেটুকু পূরণ করেই দাও না কেন ? এ-কথা নানা রকম আকারে বারবার উঠেছে। তিনি বলতেন, যে পেটুক মাছের ঝোল ভালোবাসে সে মাছকে কেটেকুটুে সাতলে সিদ্ধ করে মসলা দিয়ে নিজের মনের মতোটি করে নেয়, কিন্তু যে লোক মাছকেই সত্য ভালোবাসে সে তাকে পিতলের হাড়িতে রেখে পাথরের বাটিতে ভরতি করতে চায় ন+–সে তাকে ছাড়াজলের মধ্যেই বশ করতে পারে তো ভালো, না পারে তো ভাঙায় বসে অপেক্ষা করে —তার পরে যখন ঘরে ফেরে তখন এইটুকু তার সাৰনা থাকে যে, যাকে চাই তাকে