পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>のや রবীন্দ্র-রচনাবলী Ç খাওয়াপরা চলাফেরা ভাবাচিন্তা সমস্তই সমস্ত-পৃথিবীর যোগে । আমি তাই মনে করি এটা প্রত্যেক জাতিরই সৌভাগ্যের যুগ—এই সৌভাগ্যকে অস্বীকার করা বীরত্ব নয়। তার পরে আর-এক ল্যাঠা । মিস গিলবি যখন আমাদের অন্তঃপুরে এসেছিল তখন তাই নিয়ে কিছুদিন খুব গোলমাল চলেছিল। তার পরে অভ্যাসক্রমে সেটা চাপা পড়ে গেছে। আবার সমস্ত ঘুলিয়ে উঠল। মিস গিলবি ইংরেজ কি বাঙালি অনেকদিন সে-কথা আমারও মনে হয় নি–কিন্তু মনে হতে শুরু হল । আমি স্বামীকে বললুম, মিস গিলবিকে ছাড়িয়ে দিতে হবে। স্বামী"চুপ করে রইলেন । আমি সেদিন তাকে যা মুখে এল তাই বলেছিলুম, তিনি মান মুখ করে চলে গেলেন। আমি খুব খানিকট কাদলুম। কেঁদে যখন আমার মনটা একটু নরম হল তিনি রাত্রে এসে বললেন, দেখো, মিস গিলবিকে কেবলমাত্র ইংরেজ বলে ঝাপসা করে দেখতে আমি পারি নে। এতদিনের পরিচয়েও কি ওই নামের বেড়ার্ট ঘূচবে না ? ও যে তোমাকে ভালোবাসে । আমি একটুখানি লজ্জিত হয়ে অথচ নিজের অভিমানের অল্প একটু কাজ বজায় রেখে বললুম, আচ্ছা থাকু না, ওকে কে যেতে বলছে ? 尊 মিস গিলবি রয়ে গেল । একদিন গির্জেয় যাবার সময় পথের মধ্যে আমাদেরই একজন দূরসম্পর্কের আত্মীয় ছেলে তাকে ঢ়িল ছুড়ে মেরে অপমান করলে। আমার স্বামীই এতদিন সেই ছেলেকে পালন করেছিলেন,—তিনি তাকে তাড়িয়ে দিলেন । এই নিয়ে ভারি একটা গোল উঠল। সেই ছেলে যা বললে সবাই তাই বিশ্বাস করলে। লোকে বললে, মিস গিলবিই তাকে অপমান করেছে এবং তার সম্বন্ধে বানিয়ে বলেছে । আমারও কেমন মনে হল সেটা অসম্ভব নয়। ছেলেটার মা নেই, তার খুড়ো এসে আমাকে ধরলে। আমি তার হয়ে অনেক চেষ্টা করলুম কিন্তু কোনো ফল হল না । সেদিনকার দিনে আমার স্বামীর এই ব্যবহার কেউ ক্ষমা করতে পারলে না। আমিও না। আমি মনে মনে তাকে নিম্বাই করলুম। এইবার মিস গিলবি আপনিই চলে গেল। যাবার সময় তার চোখ দিয়ে জল পড়ল—কিন্তু আমার মন গলল না। আহা মিথ্যা করে ছেলেটার এমন সর্বনাশ করে গেল গো । আর আমন ছেলে । স্বদেশীর উৎসাহে তার নাওয়া-খাওয়া ছিল না। আমার স্বামী নিজের গাড়ি করে মিস গিলবিকে স্টেশনে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুলে দিয়ে এলেন। সেটা আমার বড়ো বাড়াবাড়ি ৰোধ হল । এই কথাটা নিয়ে নানা ভালপালা দিয়ে কাগজে যখন গাল দিলে আমার মনে হল এই শাস্তি ওঁর পাওনা ছিল ।