পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬২ রবীন্দ্র-রচনাবলী নিখিলেশের বিয়ে হয়েছে। এই নাট বছর আপনি আমাকে ফাকি দিয়ে এসেছেন। আবার ফের যদি ন-বছর করেন তাহলে আর দেখা হবে না । আমিও আত্মীয়তা শুরু করে দিয়ে মৃদুকণ্ঠে বললুম, কেন, তাহলেই বা দেখা হবে না কেন ? তিনি বললেন, আমার কুষ্ঠিতে আছে আমি অল্প বয়সে মরব। আমার বাপ দাদা কেউ ব্রিশের কোঠা পেরোতে পারেন নি। আমার তো এই সাতাশ হল । তিনি বুঝেছিলেন কথাটা আমার মনে বাজবে । বাজলও বটে । এবার আমার মৃদুকণ্ঠে বোধ হয় করুণ রসের একটু ছিটে লাগল। আমি বললুম, সমস্ত দেশের আশীর্বাদে আপনার ফাড়া কেটে যাবে। তিনি বললেন, দেশের আশীৰ্বাদ দেশলক্ষ্মীদের কণ্ঠ থেকেই তো পাব । সেই জন্তেই তো এত ব্যাকুল হয়ে আপনাকে আসতে বলছি, তাহলে আজ থেকেই আমার স্বস্ত্যয়ন আরম্ভ হবে । স্রোতের জল ঘোলা হলেও অনায়াসে তার ব্যবহার চলে । সন্দীপবাবুর সমস্তই এমনি দ্রুতবেগে সচল যে, আর-একজনের মুখে যা সইত না তার মুখে তাতে আপত্তি করবার ফাক পাওয়া যায় না । হাসতে হাসতে বললেন, দেখুন আপনার এই স্বামীকে জামিন রেখে দিলুম আপনি যদি না আসেন তাহলে ইনিও খালাস পাবেন না । আমি যখন চলে আসছি, তিনি আবার বলে উঠলেন, আমার আর-একটু সামান্ত দরকার আছে । আমিথমকে ফিরে দাড়ালুম। তিনি বললেন, ভয় পাবেন না, এক গ্লাস জল । আপনি দেখেছেন আমি খাবার সময়ে জল খাই নে—খাবার খানিক পরে থাই । এর পরে আমাকে উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাসা করতে হল, কেন বলুন দেখি ? কবে তার কঠিন অজীর্ণরোগ হয়েছিল তার ইতিহাস এল। প্রায় সাত মাস ধরে র্তার কী রকম অসহ ভোগ গিয়েছে তাও শুনলুম। অ্যালপ্যাথ হোমিওপ্যাথ সকল রকমের চিকিৎসকের উপদ্রব পার হয়ে অবশেবে কবিরাজের চিকিৎসায় কী রকম আশ্চর্য ফল পেয়েছেন তার বর্ণনা সেরে হেসে তিনি বললেন, ভগবান আমার ব্যামোগুলোও এমনি করে গড়েছেন যে, স্বদেশী বড়িটুকু হাতে-হাতে না পেলে তারা বিদায় হতে চায় না। আমার স্বামী এতক্ষণ পরে বললেন, আর বিদেশী ওষুধের শিশিগুলোও যে একদও তোমার আশ্রয় ছাড়তে চায় না—তোমার বসবার ঘরের তিনটি শেলফ ষে একেবায়ে—