পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ఆతి ওগুলো কী জান । পু্যনিটিভ পুলিশের মতো। প্রয়োজন আছে বলে যে এসেছে তা নয়—আধুনিক কালের শাসনে ওরা ঘাড়ের উপরে এসে পড়ে—কেৰল দণ্ডই দিতে হয়, গু তোও কম খাই নে । আমার স্বামী অত্যুক্তি সইতে পারেন না। কিন্তু অলংকারমাত্রই যে অত্যুক্তি, সে তো বিধাতার তৈরি নয়, মানুষের বানানো । আমি একবার আমার নিজের কোনো একটা মিথ্যার জবাবদিহির ছলে আমার স্বামীকে বলেছিলুম, গাছপালাপশুপাখিরাই আগাগোড়া সত্য বলে, বেচারীদের মিথ্যা বলবার শক্তি নেই। পশুর চেয়ে মানুষের এইখানে শ্রেষ্ঠতা, আবার পুরুষের চেয়ে মেয়েদের শ্রেষ্ঠতাও এইখানে,— মেয়েদেরই বিস্তর অলংকার সাজে এবং বিস্তর মিখ্যাও মানায় । ঘর থেকে বাইরে এসে দেখি মেজো জ। একটা জানলার খড়খড়ি একটুখানি ফাক করে ধরে বৗরান্দায় দাড়িয়ে । আমি জিজ্ঞাসা করলুম, এখানে যে –তিনি ফিস ফিস করে উত্তর করলেন, আড়ি পাতছিলুম। যখন ফিরে এলুম, সন্দীপবাবু করুণ স্বরে বললেন, আপনার আজ বোধ হয় কিছুই १f७म्नी ट्रल नों ! 粤 শুনে আমার ভারি লজ্জা হল। আমি একটু বেশি শীঘ্র ফিরে এসেছি । ভদ্ররকম পাবার জন্তে যতটা সময় দেওয়া উচিত ছিল তা দেওয়া হয় নি। আজকের আমার খাওয়ার মধ্যে না-খাওয়ার অংশটাই যে বেশি, সময়ের অঙ্ক হিসাব করলে সেটা বুঝতে বাকি থাকে না । কিন্তু কেউ যে সেই হিসাব করছিল তা আমার মনেও হয় নি । সন্দীপবাবু বোধ হয় আমার লজ্জাটুকু দেখতে পেলেন-সেইটেই আবুও লজ্জা । তিনি বললেন, বনের হরিণীর মতে আপনার তো পালাবার দিকেই ঝোক ছিল তবুও যে এত কষ্ট করে সত্য রক্ষা করলেন এ আমার কম পুরস্কার নয়। আমি ভালো করে জবাৰ দিতে পারি নি ; মুখ লাল করে ঘেষে একটা সোফার কোণে বসে পড়লুম। দেশের মূর্তিমতী নারীশক্তির মতো ষে-রকম নিঃসংকোচে এবং সগৌরবে সন্দ্বীপবাবুর কাছে বেরিয়ে কেবলমাত্র দর্শনদানের দ্বারা তার ললাটে জয়মাল্য পরাব কল্পনা করেছিলুম এ-পর্যন্ত তার কিছুই হল না। সন্দীপবাৰু ইচ্ছা করেই আমার স্বামীর সঙ্গে তর্ক বাধিয়ে দিলেন। তিনি জানেন, তর্কে তার তীক্ষুধার মনের সমস্ত উজ্জলতা ঝক ঝক করে উঠতে থাকে। এর পরেও আমি বারবার দেখেছি আমি উপস্থিত থাকলেই তিনি তর্ক করবার সামান্ড উপলক্ষটুকু ছাড়তেন না।