পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ses রবীন্দ্র-রচনাবলী ‘বন্দে মাতরম্ মন্ত্র সম্বন্ধে আমার স্বামীর মত কী তিনি জানতেন, সেইটের উল্লেখ করে বললেন, দেশের কাজে মামুষের কল্পনাবৃত্তির যে একটা জায়গা আছে সেটা কি তুমি মান না নিখিল ? একটা জায়গা আছে মানি কিন্তু সব জায়গাই তার তা মানি নে। দেশ-জিনিসকে আমি খুব সত্যরূপে নিজের মনে জানতে চাই এবং সকল লোককে জানাতে চাই— এতবড়ো জিনিসের সম্বন্ধে কোনো মন-ভোলাবার জাদুমন্ত্র ব্যবহার করতে আমি ভয়ও পাই লজ্জাও বোধ করি । তুমি যাকে মায়ামন্ত্র বলছ আমি তাকেই বলি সত্য। আমি দেশকে সত্যই দেবতা বলে মানি । আমি নরনারায়ণের উপাসক—মানুষের মধ্যেই ভগবানের সত্যকার প্রকাশ, তেমনি দেশের মধ্যে । এ-কথা যদি সত্যই বিশ্বাস কর তবে তোমার পক্ষে এক মানুষের সঙ্গে অষ্ঠ মামুষের সুতরাং এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের ভেদ নেই । সে-কথা সত্য কিন্তু আমার শক্তি অল্প, অতএব নিজের দেশের পূজার দ্বারাই আমি দেশনারায়ণের পূজা করি । இ. পূজা করতে নিষেধ করি নে কিন্তু অন্য দেশে যে-নারায়ণ আছেন তার প্রতি বিদ্বেষ করে সে পূজা কেমন ক’রে সমাধা হবে ? বিদ্বেষও পূজার অঙ্গ। কিরাতবেশী মহাদেবের সঙ্গে লড়াই করেই অর্জুন বরলাভ করেছিলেন । আমরা একদিক দিয়ে ভগবানকে মারব একদিন তাতেই তিনি প্রসন্ন হবেন । তাই মুদি হয়, তবে যারা দেশের ক্ষতি করছে আর ধারা দেশের সেবা করছে উভয়েই তার উপাসনা করছে—তাহলে বিশেষ করে দেশভক্তি প্রচার করবার দরকার নেই। o নিজের দেশ সম্বন্ধে আলাদা কথা—ওখানে যে হৃদয়ের মধ্যে পূজার স্পষ্ট উপদেশ আছে । তাহলে শুধু নিজের দেশ কেন, তার চেয়ে আরও ঢের স্পষ্ট উপদেশ আছে নিজেরই সম্বন্ধে। নিজের মধ্যে যে নরনারায়ণ আছেন তার পূজার মন্ত্রটাই যে দেশ বিদেশে সব চেয়ে বড়ো করে কানে বাজছে । নিখিল, তুমি যে এই সব তর্ক করছ এ কেবল বুদ্ধির শুকনো তর্ক। হৃদয় বলে একটা পদার্থ আছে তাকে কি একেবারে মানবে না ? আমি তোমাকে সত্য বলছি সঙ্গীপ, দেশকে দেবতা বলিয়ে যখন তোমরা