পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>ዓ © রবীন্দ্র-রচনাবলী কোনোমতেই ধরা যায় না। স্মৃতিসংহিতার পুথির কাগজের কাটা ফুলে আমি ঘর সাজাতে চাই নি ; বিশ্বের মধ্যে জ্ঞানে শক্তিতে প্রেমে পূর্ণবিকশিত বিমলকে দেখবার বড়ো ইচ্ছা ছিল। একটা কথ। তখন ভাবি নি মানুষকে যদি তার পূর্ণ মুক্তরূপে সত্যরূপেই দেখতে চাই তাহলে তার উপরে একেবারে নিশ্চিত দাবি রাখবার আশা ছেড়ে দিতে হয় । এ-কথা কেন ভাবি নি ? স্ত্রীর উপর স্বামীর নিত্য-দখলের অহংকারে ? না, তা নয়। ভালোবাসার উপর একান্ত ভরসা ছিল বলেই । সত্যের সম্পূর্ণ অনাবৃত রূপ সহ করবার শক্তি আমার আছে এই অহংকার আমার মনে ছিল। আজ তার পরীক্ষা হচ্ছে । মরি আর বঁচি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হব এই অহংকার এখনো মনে রেখে দিলুম। আজ পর্যন্ত বিমল এক জায়গায় আমাকে কোনোমতেই বুঝতে পারে নি। জবরদস্তিকে আমি বরাবর দুর্বলতা বলেই জানি। যে দুর্বল সে সুবিচার করতে সাহস করে না,—ন্তায়পরতার দায়িত্ব এড়িয়ে অন্যায়ের দ্বারা সে তাড়াতাড়ি ফল পেতে চায়। ধৈর্যের পরে বিমলের ধৈর্য নেই। পুরুষের মধ্যে সে দুর্দাস্ত, ক্রুদ্ধ, এমন কি, অন্যায়কারীকে দেখতে ভালোবাসে। শ্রদ্ধার সঙ্গে একটা ভয়ের আকাজক্ষা যেন তার মনে আছে । ভেবেছিলুম বড়ো জায়গায় এসে জীবনকে যখন সে বড়ো করে দেখবে তখন দৌরাত্ম্যের প্রতি এই মোহ থেকে সে উদ্ধার পাবে। কিন্তু আজ দেখতে পাচ্ছি ওটা বিমলের প্রকৃতির একটা অঙ্গ । উৎকটের উপরে ওর অস্তরের ভালোবাস । জীবনের সমস্ত সহজ সরল রসকে সে লঙ্কামরিচ দিয়ে ঝাল আগুন করে জিবের ডগ। থেকে পাকযন্ত্রের তলা পর্যন্ত জালিয়ে তুলতে চায়–অন্ত সমস্ত স্বাদকে সে একরকম অবজ্ঞা করে । তেমনি আমার পণ এই যে, কোনো একটা উত্তেজনার কড়া মদ খেয়ে উন্মত্তের মতো দেশের কাজে লাগব না। আমি বরঞ্চ কাজের ক্রটি সহ করি তবু চাকরবাকরকে মারধর করতে পারি নে, কারও উপর রেগেমেগে হঠাৎ কিছু একটা বলতে বা করতে আমার সমস্ত দেহমনের ভিতর একটা সংকোচ বোধ হয় । আমি জানি আমার এই সংকোচকে মৃদ্ধতা বলে বিমল মনে মনে অশ্রদ্ধা করে—আজ সেই একই কারণ থেকে সে ভিতরে ভিতরে আমার উপরে রাগ করে উঠছে যখন দেখছে আমি বন্দেমাতরম' হেঁকে চারিদিকে যা-ইচ্ছে-তাই করে বেড়াই নে । আজ সমস্ত দেশের ভৈরবীচক্ৰে মদের পাত্র নিয়ে আমি যে বসে যাই নি এতে