পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ֆե'o রবীন্দ্র-রচনাবলী সন্দ্বীপবাবু দেশের সম্বন্ধে প্রত্যেক ছোটো বিষয়ে আমার পরামর্শ নিতেন । প্রথমটা আমার ভারি সংকোচ বোধ হত কিন্তু সেটা অল্প দিনেই কেটে গেল । আমি ষা বলতুম তাতেই সন্দীপবাবু আশ্চর্য হয়ে যেতেন। তিনি কেবলই বলতেন, আমরা পুরুষরা কেবলমাত্ৰ ভাবতেই পারি, কিন্তু আপনারা বুঝতে পারেন, আপনাদের আর ভাবতে হয় না । মেয়েদেরই বিধাতা মানস থেকে স্বষ্টি করেছেন আর পুরুষদের তিনি হাতে করে হাতুড়ি পিটিয়ে গড়েছেন। শুনতে শুনতে আমার বিশ্বাস হয়েছিল আমার মধ্যে সহজ বুদ্ধি, সহজ শক্তি এতই সহজ যে আমি নিজেই এতদিন তাকে দেখতে পাই নি । দেশের চারিদিক থেকে নানা কথা নিয়ে সন্দীপবাবুর কাছে চিঠি আসত, সে সমস্তই আমি পড়তুম, এবং আমার মত না নিয়ে তার কোনোটার জবাব যেত না । মাঝে মাঝে এক-এক দিন সন্দীপবাবু আমার সঙ্গে মতে মিলতেন না। আমি তার সঙ্গে তর্ক করতুম না। কিন্তু তার দু-দিন পরে সকালে যেন ঘুম থেকে উঠেই তিনি একটা আলো দেখতে পেতেন এবং তখনই আমাকে ডাকিয়ে এনে বলতেন, দেখুন সেদিন আপনি য। বলেছিলেন সেটাই সত্য, আমার সমস্ত তর্ক ভুল –এক-এক দিন বলতেন, আপনার যে পরামর্শটি নিই নি সেইটেতেই আমি ঠকেছি। আচ্ছ। এর রহগুট। কী আমাকে বুঝিয়ে দিতে পারেন ? ক্রমেই আমার বিশ্বাস পাকা হতে লাগল যে, সেদিন সমস্ত দেশে যা-কিছু কাজ চলছিল তার মূলে ছিলেন সন্দীপবাবু, আর তারও মূলে ছিল একজন সামান্ত স্ত্রীলোকের সহজ বুদ্ধি। প্রকাও একটা দায়িত্বের গৌরবে আমার মন ভরে রইল। আমাদের এই সমস্ত পরামর্শের মধ্যে আমার স্বামীর কোনো স্থান ছিল না। দাদা যেমন আপনার নাবালক ভাইটিকে খুবই ভালোবাসে অথচ কাজে কর্মে তার বুদ্ধির উপর কোনো ভরসা রাখে না, সন্দীপবাবু আমার স্বামীর সম্বন্ধে সেইরকম ভাবটা প্রকাশ করতেন । আমার স্বামী যে এ-সব বিষয়ে একেবারে ছেলেমানুষের মতো, তার বুদ্ধিবিবেচনা একেবারে উলটোরকম, এ-কথা সন্দ্বীপবাবু যেন খুব গভীর স্নেহের সঙ্গে হাসতে হাসতে বলতেন। আমার স্বামীর এই সমস্ত অদ্ভূত মত ও বুদ্ধিবিপর্যয়ের মধ্যে এমন একটি মজার রস আছে যেন সেইজন্যেই সীপবাবু তাকে আরও বেশি করে ভালোবাসতেন। তাই তিনি নিরতিশয় স্নেহের সঙ্গেই আমার স্বামীকে দেশের সমস্ত দায় থেকে একেবারে রেহাই দিয়েছিলেন । প্রকৃতির ডাক্তারিতে ব্যথা অঘাড় করবার অনেক এযুদ্ধ আছে । যখন কোনো একটা গভীর সম্বন্ধের নাড়ি কাটা পড়তে থাকে তখন ভিতরে ভিতরে কখন যে