পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>b8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু বড়ো শক্ত সমস্ত ! সোজা মেয়ে তো নয়। ননকুকে ছাড়ানোর উপলক্ষে জায়েদের উপর অপমানের শোধ তোলা চাই। নিখিল চুপ করেই রইল। তখন মক্ষীর চোখ দিয়ে আগুন ঠিকরে পড়তে লাগল । নিখিলের ভালোমামৃষির পরে তার ঘৃণার আর অস্ত রইল না । নিখিল কোনো কথা না বলে উঠে ঘর থেকে চলে গেল । পরদিন সেই দরোয়ানকে দেখা গেল না। খবর নিয়ে শুনলুম, তাকে নিখিল মফস্বলের কোন কাজে নিযুক্ত করে পাঠিয়েছে—দরোয়ানজির তাতে লাভ বই ক্ষতি शम्र नि । এইটুকুর ভিতরে নেপথ্যে কত ঝড় বয়ে গেছে সে তো আভাসে বুঝতে পারছি । বারে বারে কেবল এই কথাই মনে হয়। নিখিল অদ্ভুত মানুষ, একেবারে স্বইছাড়া । এর ফল হল এই যে, এর পরে কিছুদিন মক্ষী রোজই বৈঠকখানায় এসে বেহারাকে দিয়ে আমাকে ডাকিয়ে এনে আলাপ করতে আরম্ভ করলে—কোনোরকম প্রয়োজনের কিংবা আকস্মিকতার ছুতোটুকু পর্যন্ত রাখলে না । এমন করেই ভাবভঙ্গি ক্রমে আকার-ইঙ্গিতে, অস্পষ্ট ক্রমে স্পষ্টতায় জমে উঠতে থাকে। এ যে ঘরের বউ, বাইরের পুরুষের পক্ষে একেবারে নক্ষত্ৰলোকের মান্তম । এখানে কোনো বাধা পথ নেই। এই পথহীন শূন্যের ভিতর দিয়ে ক্রমে ক্রমে টানাটানি, জানাজানি, অদৃশু হাওয়ায়-হাওয়ায় সংস্কারের পর্দা একটার পর আরএকটা উড়িয়ে দিয়ে কোন এক সময়ে একেবারে উলঙ্গ প্রকৃতির মাঝখানে এসে পৌছনো, সত্যের এ এক আশ্চর্য জয়যাত্রা । সত্য নয় তো কী ! স্ত্রীপুরুষের পরস্পরের যে মিলের টান, সেটা হল একটা বাস্তব জিনিস ; ধুলোর কণা থেকে আরম্ভ করে আকাশের তারা পর্যন্ত জগতের সমস্ত বস্তুপুঞ্জ তার পক্ষে ; আর মানুষ তাকে কতক গুলো বচন দিয়ে আড়ালে রাখতে চায়, তাকে ঘরগড়া বিধিনিষেধ দিয়ে নিজের ঘরের জিনিস করে বানাতে বসেছে । যেন সৌরজগৎকে গলিয়ে জামাইয়ের জন্যে ঘড়ির চেন করবার ফরমাশ । তার পরে বাস্তব যেদিন বস্তুর ডাক শুনে জেগে ওঠে, মাহুষের সমস্ত কথার ফাকি এক মুহূর্তেই উড়িয়ে পুড়িয়ে দিয়ে আপনার জায়গায় এসে দাড়ায়, তখন ধর্ম বল, বিশ্বাস বল— কেউ কি তাকে ঠেকাতে পারে ? তখন কত ধিক্কার, কত হাহাকার, কত শাসন— কিন্তু ঝড়ের সঙ্গে ঝগড়া করবে কি শুধু মুখের কথায় ? সে তো জবাব দেয় না, সে শুধু নাড়া দেয়, সে যে বাস্তব। তাই চোখের সামনে সত্যের এই প্রত্যক্ষ প্রকাশ দেখতে আমার তারি চমৎকার