পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>brb" রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি বললুম, পৃথিবীতে দুর্বল লোকের সংখ্যাই বেশি ; তারা নিজের প্রাণ বঁাচাবার জন্তে ওই রকমের মন্ত্র দিনরাত পৃথিবীর কানে আউড়ে আউড়ে সবল লোকের কান খারাপ করে দিচ্ছে। স্বভাব যাদের বঞ্চিত ক’রে, কাহিল ক’রে রেখেছে, তারাই অন্যের স্বভাবকে কাহিল করবার পরামর্শ দেয় । মক্ষী বললে, আমরা মেয়েরাও তো দুর্বল, দুর্বলের ষড়যন্ত্রে আমাদেরও তো যোগ দিতে হবে । আমি হেসে বললুম, কে বললে দুর্বল ? পুরুষমানুষ তোমাদের অবলা বলে স্তুতিবাদ ক’রে-ক’রে তোমাদের লজ্জা দিয়ে দুর্বল করে রেখেছে । আমার বিশ্বাস তোমরাই সবল। তোমর। পুরুষের মস্ত্রে-গড় দুর্গ ভেঙে ফেলে ভয়ংকরী হয়ে মুক্তি লাভ করবে, এ আমি লিখে পড়ে দিচ্ছি। বাইরেই পুরুষরা ইাকডাক করে বেড়ায় কিন্তু তাদের ভিতরটা তো দেখছ, তারা অত্যন্ত বদ্ধ জীব । আজ পর্যস্ত তারাই তো নিজের হাতে শাস্ত্র গড়ে নিজেকে বেঁধেছে, নিজের ফুয়ে এবং আগুনে মেয়েজাতকে সোনার শিকল বানিয়ে অস্তরে বাইরে আপনাকে জড়িয়েছে । এমনি করে নিজের ফাদে নিজেকে বধিবার অদ্ভূত ক্ষমতা যদি পুরুষের না থাকত তাহলে পুরুষকে আজ ধরে রাখত কে ? নিজের তৈরি ফাদই পুরুষের সব-চেয়ে বড়ো উপাস্ত দেবতা । তাকেই পুরুষ নানা রঙে রাঙিয়েছে, নানা সাজে সাজিয়েছে, নানা নামে পূজো দিয়েছে। কিন্তু মেয়েরা ? তোমরাই দেহ দিয়ে মন দিয়ে পৃথিবীতে রক্তমাংসের বাস্তবকে চেয়েছ, বাস্তবকে জন্ম দিয়েছ, বাস্তবকে পালন করেছ । মক্ষী শিক্ষিত মেয়ে, সহজে তর্ক করতে ছাড়ে না,—সে বললে, তাই যদি সত্যি হত তাহলে পুরুষ কি মেয়েকে পছন্দ করতে পারত ? আমি বললুম, মেয়ের সেই বিপদের কথা জানে—তারা জানে পুরুষজাতটা স্বভাবত ফাকি ভালোবাসে সেইজন্তে তারা পুরুষের কাছ থেকেই কথা ধার করে ফাকি সেজে পুরুষকে ভোলাবার চেষ্টা করে । তারা জানে খাণ্ডের চেয়ে মদের দিকেই স্বভাবমাতাল পুরুষজাতটার বোক বেশি, এইজন্তেই নানা কৌশলে নানা ভাবে-ভঙ্গিতে তার নিজেকে মদ বলেই চালাতে চায়, আসলে তারা যে খাদ্য সেটা যথাসাধ্য গোপন করে রাখে । মেয়েরা বস্তুতন্ত্র, তাদের কোনো মোহের উপকরণের দরকার করে না—পুরুষের জন্তেই তে। যত রকম-বেরকম মোঙ্কের আয়োজন । মেয়ের মোহিনী হয়েছে নেহাত দায়ে পড়ে । মক্ষী বললে, তবে এ মোহ ভাঙতে চান কেন ? আমি বললুম, স্বাধীনতা চাই বলে। দেশেও স্বাধীনতা চাট, মানুষের সঙ্গে