পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে Se এক-একবার চমকে উঠে আপনার দিকে তাকাই আর ভাবি আমি আগাগোড় একটা দুঃস্বপ্ন—এক সময়ে হঠাৎ দেখতে পাব এ-আমি সত্য নয়। এ যে ভয়ানক অসংলগ্ন, এর যে আগার সঙ্গে গোড়ার মিল নেই–এ যে মায়া জাদুকরের মতো কালো কলঙ্ককে ইশ্রধস্থর রঙে রঙে রঙিন করে তুলেছে। এ যে কী হল, কেমন করে হল কিছুই বুঝতে পারছি নে । একদিন আমার মেজো জা এসে হেসে বললেন, আমাদের ছোটোরানীর গুণ আছে । অতিথিকে এত যত্ন, সে যে ঘড় ছেড়ে এক তিল নড়তে চায় না। আমাদের সময়েও অতিথিশালা ছিল কিন্তু অতিথির এত বেশি আদর ছিল না—তখন একটা দস্তুর ছিল স্বামীদেরও যত্ন করতে হত। বেচারণ ঠাকুরপো একাল- ঘেঁষে জন্মেছে বলেই ফাকিতে পড়ে গেছে। ওর উচিত ছিল অতিথি হয়ে এ-বাড়িতে আসা, তাহলে কিছুকাল টিকতে পারত—এখন বড়ে সন্দেহ । ছোটে রাক্ষুলী, একবার কি তাকিয়ে দেখতেও নেই ওর মুখের ছিরি কী রকম হয়ে গেছে । এ-সব কথা একদিন আমার মনে লাগতই না ; তখন ভাবতুম আমি যে-ব্রত নিয়েছি এরা তার মানেই বুঝতে পারে না । তখন আমার চারিদিকে একটা ভাবের আবরু ছিল—তখন ভেবেছিলুম আমি দেশের জন্ত প্রাণ দিচ্ছি আমার লজ্জাশরমের দরকার নেই । কিছুদিন থেকে দেশের কথা বন্ধ হয়ে গেছে । এখনকার আলোচনা, মডারম্ কালের স্ত্রীপুরুষের সম্বন্ধ, এবং অন্ত হাজার রকমের কথা । তারই ভিতরে-ভিতরে ইংরেজি কবিতা এবং বৈষ্ণব কবিতার আমদানি—সেই সমস্ত কবিতার মধ্যে এমন একটা স্বর লাগানো চলছে যেটা হচ্ছে খুব মোট তারের স্বর। এই স্বরের স্বাদ আমার ঘরে আমি এতদিন পাই নি—আমার মনে হতে লাগল, এইটেই পৌরুষের সুর, প্রবলের স্বর । কিন্তু আজ আর কোনো আড়াল রইল না—কেন ষে সন্দ্বীপবাবু দিনের পর দিন বিনা কারণে এমন করে কাটাচ্ছেন, কেনই যে আমি যখন-তখন তার সঙ্গে বিনা প্রয়োজনের আলাপ-আলোচনা করছি, আজ তার কিছুই জবাব দেবার নেই। তাই আমি সেদিন নিজের উপর,আমার মেজো জায়ের উপর, সমস্ত জগতের ব্যবস্থার উপর খুব রাগ করে বললুম, না, আমি আর বাইরের ঘরে যাব না—মরে গেলেও না। ছদিন বাইরে গেলুম না। সেই দুদিন প্রথম পরিষ্কার করে বুঝলুম কত দূরে গিয়ে পৌছেছি। মনে হল যেন একেবারে জীবনের স্বাদ চলে গেছে। ষেন সমস্তই ছুয়ে ছয়ে ঠেলে ঠেলে ফেলে দিতে ইচ্ছে করে । মনে হল কার জন্তে যেন আমার Εν-80,