পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে శిeసి আমাকে নিয়ে তোমার সন্তোষ নেই, তুমি এমন অসামান্ত কাউকে চাও, যে তোমার বুদ্ধিকে অভিভূত করে দেবে, তাই আর একটা-আমাকে তুমি মন দিয়ে গড়ে তোমার মন ভোলাচ্ছ । আমি বললুম, তোমার এই কথাগুলো শুনলে আমার রাগ হয় । তিনি বললেন, রাগ আমার উপরে করে কী হৰে, তোমার অদৃষ্টের উপর করে । তুমি তো আমাকে স্বয়ংবর সভায় বেছে নাও নি, যেমনটি পেয়েছ তেমনি তোমাকে চোখ বুজে নিতে হয়েছে—কাজেই দেবত্ব দিয়ে আমাকে যতটা পার সংশোধন করে নিচ্ছ । দময়ন্তী স্বয়ংবরা হয়েছিলেন বলেই দেবতাকে বাদ দিয়ে মানুষকে নিতে পেরেছিলেন, তোমরা স্বয়ংবর হতে পার নি বলেই রোজ মানুষকে বাদ দিয়ে দেবতার গলায় মালা দিচ্ছ । সেদিন এই কথাটা নিয়ে এত রাগ করেছিলুম ষে আমার চোখ দিয়ে জল পড়ে গিয়েছিল। তাই মনে করে আজ ওই কুলুঙ্গিটার দিকে চোখ তুলতে পারি নে । ওই যে আমার গয়নার বাক্সের মধ্যে আর-এক ছবি আছে । সেদিন বাইরের বৈঠকখানাঘর ঝাড়পোছ করবার উপলক্ষ্যে সেই ফোটোস্ট্যাওখানা তুলে এনেছি, সেই যার মধ্যে আমার স্বামীর ছবির পাশে সন্দীপের ছবি আছে । সে-ছবি তো পুজো করি নে, তাকে প্রণাম করা চলে না—সে রইল আমার হীরে-মানিক-মুক্তোর মধ্যে ঢাকা । সে লুকোনো রইল বলেই তার মধ্যে এত পুলক । ঘরে সব দরজা বন্ধ করে তবে তাকে খুলে দেখি । রাত্রে আস্তে আস্তে কেরোসিনের বাতিট। উসকে তুলে তার সামনে ওই ছবিটা ধরে চুপ করে চেয়ে বসে থাকি। তার পরে রোজই মনে করি এই কেরোলিনের শিখায় ওকে পুড়িয়ে ছাই করে চিরদিনের মতো চুকিয়ে ফেলে দিই—আবার রোজই দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে জামার ধীরে-মানিক-মুক্তোর নিচে তাকে চাপা দিয়ে চাবি-বন্ধ করে রাখি । কিন্তু, পোড়ারমুখী, এই হীরে-মানিকমুক্তো তোকে দিয়েছিল কে ? এর মধ্যে কত দিনের কত অাদর জড়িয়ে আছে । তারা আজ কোথায় মুখ লুকোবে ? মরণ হলে যে বাচি । সন্দীপ একদিন আমাকে বলেছিলেন, দ্বিধা করাটা মেয়েদের প্রকৃতি নয়। তার ডাইনে বায়ে নেই, তার একমাত্র আছে সামনে । তিনি বার বার বলেন, দেশের মেয়েরা যখন জাগবে তখন তারা পুরুষের চেয়ে ঢের বেশি স্পষ্ট করে বলবে, “আমরা চাই,”—সেই চাওয়ার কাছে কোনো ভালো-মন্স, কোনো সম্ভব-অসম্ভবের তর্কবিতর্ক টিকতে পারবে না। তাদের কেবল এক কথা, “আমরা চাই।” “আমি চাই,” এই বাণীই হচ্ছে স্বাক্টর মূল বাণী—সেই বাণীই কোনো শাস্ত্ৰবিচার না করে আগুন হয়ে b------ ۹۹