পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ、>8 রবীন্দ্র-রচনাবলী একটা প্রশ্ন কদিন ধরে মাথায় ঘুরছে, কেন বিমলের সঙ্গে জীবনটাকে জড়িয়ে ফেলতে দিচ্ছি ? আমার জীবনটা তো ভেসে-যাওয়া কলার ভেলা নয় যে যেখানে সেখানে ঠেকতে ঠেকতে চলবে । সেই কথাই তো বলছিলুম, যে-একটিমাত্র আইডিয়ার ছাচে জীবনটাকে পরিমিত করতে চাই, জীবন তাকে ছাপিয়ে যায় । থেকে থেকে মানুষ ছিটকে ছিটকে পড়ে । এবার আমি যেন বেশি দূরে ছিটকে পড়েছি । বিমল ষে আমার কামনার বিষয় হয়ে উঠেছে সেজন্যে আমার কোনো মিথ্যে লজ্জা নেই। আমি যে স্পষ্ট দেখছি ও আমাকে চায়—৪ই তো আমার স্বকীয়া । গাছে ফল বোটায় ঝুলে আছে, সেই বোটার দাবিকেই চিরকালের বলে মানতে হবে নাকি ? ওর যত রস যত মাধুর্য সে যে আমার হাতে সম্পূর্ণ খসে পড়বার জন্তেই— সেইখানেই একেবারে আপনাকে ছেড়ে দেওয়াই ওর সার্থকতা,—সেই ওর ধর্ম, ওর নীতি। আমি সেইখানেই ওকে পেড়ে আনব, ওকে ব্যর্থ হতে দেব না । কিন্তু আমার ভাবনা এই যে, আমি জড়িয়ে পড়ছি, মনে হচ্ছে আমার জীবনে বিমল বিষম একটা দায় হয়ে উঠবে। আমি পৃথিবীতে এসেছি কতৃত্ব করতে—আমি লোককে চালনা করব কথায় এবং কাজে,—সেই লোকের ভিড়ই আমার যুদ্ধের ঘোড়, আমার আসেন তার পিঠের উপরে, তার রাশ আমার হাতে, তার লক্ষ্য সে জানে না শুধু আমিই জানি, কাটায় তার পায়ে রক্ত পড়বে, কাদায় তার গা ভরে যাবে, তাকে বিচার করতে দেব না, তাকে ছোটাব । সেই আমার ঘোড়। আজ দরজায় দাড়িয়ে অস্থির হয়ে খুর দিয়ে মাটি খুঁড়ছে, তার হ্ৰেষধ্বিনিতে সমস্ত আকাশ আজ কেঁপে উঠল, কিন্তু আমি করছি কী ? দিনের পর দিন আমার কী নিয়ে কাটছে ? ওদিকে আমার এমন শুভদিন যে বয়ে গেল । আমার ধারণা ছিল আমি ঝড়ের মতে ছুটে চলতে পারি—ফুল ছিড়ে আমি মাটিতে ফেলে দিই কিন্তু তাতে আমার চলার ব্যাঘাত করে না । কিন্তু এবার যে আমি ফুলের চারদিকে ফিরে ফিরে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছি ভ্রমরেরই মতো ; ঝড়ের মতো নয় । তাই তো বলি, নিজের আইডিয়া দিয়ে নিজেকে ঘে-রঙে আঁকি সব জায়গায় সে-রঙ তো পাকা হয়ে ধরে না, হঠাৎ দেখতে পাই সেই সামান্ত মাছুযটাকে । কোনো এক অস্তৰ্যামী যদি আমার জীবনবৃত্তান্ত লিখতেন তাহলে নিশ্চয় দেখা যেত আমার সঙ্গে আর ওই পাচুর সঙ্গে বেশি তফাৎ নেই—এমন কি, ওই নিখিলেশের সঙ্গে । কাল রাত্রে আমার আত্মকাহিনীর খাতাটা নিয়ে খুলে পড়ছিলুম। তখন সবে বি. এ.