পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে ՀՖ(t পাস করেছি, ফিলজফিতে মগজ ফেটে পড়ছে বললেই হয়। তখন থেকেই পণ করেছিলুম নিজের হাতে বা পরের হাতে গড় কোনো মায়াকেই জীবনের মধ্যে স্থান দেব না—জীবনটাকে আগাগোড়া একেবারে নিরেট বাস্তব করে তুলব। কিন্তু তার পর থেকে আজ পর্যস্ত সমস্ত জীবনকাহিনীটাকে কী দেখছি ? কোথায় সেই ঠাসবুনোনি ? এ যে জালের মতো—স্বত্র বরাবর চলেছে—কিন্তু স্বত্র যতখানি, ফাক তার চেয়ে বেশি বই কম নয় । এই ফাকাটার সঙ্গে লড়াই করে করে একে সম্পূর্ণ হার মানানো গেল না। কিছুদিন বেশ একটু নিশ্চিস্ত হয়ে জোরের সঙ্গেই চলছিলুম—আজ দেখি আবার একটা মস্ত ফাক । অrজ দেখি মনের মধ্যে ব্যথা লাগছে । “আমি চাই, হাতের কাছে এসেছে, ছিড়ে নেব”—এ হল খুব স্পষ্ট কথা, খুব সংক্ষেপ রাস্তা,—এই রাস্তায় যারা জোরের সঙ্গে চলতে পারে তারাই সিদ্ধিলাভ করে এই কথা আমি চিরদিন বলে আসছি । কিন্তু ইন্দ্রদেব এই তপতাকে সহজ করতে দিলেন না, তিনি কোথা থেকে বেদনার অঙ্গরীকে পাঠিয়ে দিয়ে সাধকের দৃষ্টিকে ৰাষ্পজালে অস্পষ্ট করে দেন। দেখছি বিমল জালে-পড়া হরিণীর মতো ছটফট করছে, তার বড়ো বড়ো দুই চোথে কত ভয়, কত করুণ, জোর করে বাধন ছিড়িতে গিয়ে তার দেহ ক্ষতবিক্ষত— ব্যাধ তো এই দেখে খুশি হয়। আমার খুশি আছে কিন্তু ব্যথাও আছে। সেইজন্তে cকবলই দেরি হয়ে যাচ্ছে—তেমন জোরে ফাস কষতে পারছি নে । আমি জানি দুবার-তিনবার এমন এক-একটা মুহূর্ত এসেছে যখন আমি ছুটে গিয়ে বিমলার হাত চেপে ধরে তাকে আমার বুকের উপর টেনে আনলে সে একটি কথা বলতে পারত না,—সেও বুঝতে পারছিল এখনই একটা কী ঘটতে যাচ্ছে যার পর থেকে জগৎসংসারের সমস্ত তাৎপর্য একেবারে বদলে যাবে ;—সেই পরম অনিশ্চিভের গুহার সামনে দাড়িয়ে তার মুখ ফ্যাকাশে, তার ছুই চক্ষে ভয় অথচ উদ্দীপনার দীপ্তি ; এই সময়টুকুর মধ্যে একটা কিছু স্থির হয়ে যাবে তারই জন্তে সমস্ত আকাশ-পাতাল নিঃশ্বাস রোধ করে যেন থমকে দাড়িয়ে ; কিন্তু সেই মুহূতগুলিকে বয়ে যেতে দিয়েছি— নি:সংকোচ বলের সঙ্গে নিশ্চিতপ্রায়কে এক নিমেষে নিশ্চিত হয়ে উঠতে দিই নি । এর থেকে বুঝতে পারছি এতদিন যে-সব বাধা আমার প্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে ছিল, তার। আজ আমার রাস্তা জুড়ে দাড়িয়েছে । যে-রাবণকে আমি রামায়ণের প্রধান নায়ক বলে শ্রদ্ধা করি সেও এমনি করেই মরেছিল । সীতাকে আপনার অস্তঃপুরে না এনে সে অশোকবনে রেখেছিল—অতবড়ো বীরের অন্তরের মধ্যে ওই এক জায়গায় একটু ষে কাচ সংকোচ ছিল তারই জন্তে