পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミ>や রবীন্দ্র-রচনাবলী সমস্ত লঙ্কাকাগুট। একেবারে ব্যর্থ হয়ে গেল। এই সংকোচটুকু না থাকলে সীতা আপন সতী নাম ঘুচিয়ে রাবণকে পুজো করত। এইরকমেরই একটু সংকোচ ছিল বলেই ষে-বি ভীষণকে তার মারা উচিত ছিল, তাকে রাবণ চিরদিন দয়া এবং অবজ্ঞা করলে, আর ম’লো নিজে । জীবনের ট্রাজেডি এইখানেই । সে ছোটো হয়ে হৃদয়ের এক তলায় লুকিয়ে থাকে তার পরে বড়োকে এক মুহূর্তে কাত করে দেয়। মানুষ আপনাকে যা বলে জানে মানুষ তা নয়, সেইজন্তেই এত অঘটন ঘটে । নিখিল যে এমন অদ্ভূত—তাকে দেখে যে এত হাসি, তবু ভিতরে ভিতরে এও কিছুতে অস্বীকার করতে পারি নে যে, সে আমার বন্ধু। প্রথমটা তার কথা বেশি কিছু ভাবি নি কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে তার কাছে লজ্জা পাচ্ছি কষ্টও বোধ হচ্ছে । এক-একদিন আগেকার মতো তার সঙ্গে খুব করে গল্প করতে তর্ক করতে যাই, কিন্তু উৎসাহটা কেমন অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে—এমন কি, যা কখনো করি নে তাও করি, তার মতের সঙ্গে মত মেলাবার ভান করে থাকি । কিন্তু এই কপটতা জিনিষটা আমার সয় না, এটা নিখিলেরও সয় না—এইখানে ওর সঙ্গে আমার মিল আছে । তাই জন্তে আজকাল নিখিলকে এড়িয়ে চলতে চাই, কোনোমতে দেখাটা না হলেই বাচি । এই সব হচ্ছে দুর্বলতার লক্ষণ । অপরাধের ভূতটাকে মানবামাত্রই সে একটা সত্যকার জিনিস হয়ে দাড়ায়—তখন তাকে যতই অবিশ্বাস করি না কেন, সে চেপে ধরে । আমি নিখিলের কাছে এইটেই অসংকোচে জানাতে চাই এ-সব জিনিসকে বড়ো করে বাস্তব করে দেখতে হবে । যা সত্য তার মধ্যে প্রকৃত বন্ধুত্বের কোনো ব্যাঘাত থাকা উচিত নয় । কিন্তু এ-কথাটা আর অস্বীকার করতে পারছি নে এইবার আমাকে দুর্বল করেছে । আমার এই দুর্বলতায় বিমল মুগ্ধ হয় নি—আমার অসংকোচ পৌরুষের আগুনেই সেই পতঙ্গিনী তার পাখী পুড়িয়েছে । আবেশের ধোয়ায় যখন আমাকে আচ্ছন্ন করে তখন বিমলার মনও আবিষ্ট হয়, কিন্তু তখন ওর মনে ঘৃণা জন্মে ; তখন আমার গল থেকে ওর স্বয়ংবরের মালা ফিরিয়ে নিতে পারে না বটে কিন্তু সেটা দেখে ও চোখ বুজতে চায় । কিন্তু ফেরবার পথ বন্ধ হয়ে গেছে, আমাদের দুজনেরই। বিমলাকে যে ছাড়তে পারব এমন শক্তিও নিজের মধ্যে দেখছি নে । তাই বলে নিজের পথটাও আমি ছাড়তে পারব না। আমার পথ লোকের ভিড়ের পথ—এই অন্তঃপুরের খিড়কির